সিদ্দিক হোসেনের টক বরই

টাঙ্গাইলের সখীপুরের সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে চলছে বরই বাছাই।  ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলের সখীপুরের সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে চলছে বরই বাছাই। ছবি: প্রথম আলো

টক বরই নাম শুনলেই কার না জিবে পানি আসে। মেয়েরা তো টক বরইয়ের পাগল। সাধারণত ফাল্গুন মাসে বরই পাকে। তখন বাজারে প্রচুর বরই পাওয়া যায়। টক বরইয়ের দাম থাকে তখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। টাঙ্গাইলের সখীপুরের সিদ্দিক হোসেন একটু ব্যতিক্রমী চাষি। তিনি আগাম টক বরইয়ের চাষ করছেন। ফলে অগ্রহায়ণ মাসের শেষে ও পৌষ মাসের শুরুতে এক কেজি পাকা বরই ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ফলে তিনি বরই চাষে আয় করছেন বেশি। গত মাসে তিনি প্রায় ১৪ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আগামী ১৫ দিনে তিনি ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার বরই বেচবেন বলে আশা করছেন।

 সিদ্দিক হোসেন সখীপুর উপজেলার নিজ গ্রাম ইন্দারজানী ছাড়াও আশপাশের আরও চার গ্রামে মোট ১১ একর জমিতে সাতটি টক বরইয়ের বাগান করেছেন। উপজেলার গড়বাড়ী গ্রামে দুই একর, বিন্নাখাইরা গ্রামে দুই একর, শিরীরচালা গ্রামে দেড় একর, শ্রীপুর গ্রামে দুই একর ও নিজ গ্রাম ইন্দারজানীতে বাড়ির আশপাশে তিনি সাড়ে তিন একর জমিতে মোট তিন হাজার বরইগাছ লাগিয়েছেন। এবার তাঁর মাত্র দুই হাজার গাছে ফলন হয়েছে। আগামী বছর তাঁর তিন হাজার গাছেই বরই আসবে।

সিদ্দিক হোসেন গত বছরও ১৬ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছিলেন। আগামী বছর ৫০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। কয়েকটি বাগানে বরইগাছের ফাঁকে ফাঁকে উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, সফেদা, জাম্বুরা, ডালিম, বেল, রামভুটান গাছও লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, বরইগাছ থেকে বরই তোলা শেষ হলে গোড়ার দিকে ২ ফুট পরিমাণ গাছ রেখে কেটে ফেলা হয়। ওই সময় বরইগাছের ফাঁকে বোনা ফল গাছ থেকেও ফলন পাওয়া যাবে।

গত মঙ্গলবার সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১২ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক বাগান থেকে সংগ্রহ করা বরই বাছাই করে বস্তায় ভরছেন। বিকেলে তাঁর নিজস্ব পিকআপ ভ্যানে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে ওই বরই পাঠাবেন বলে জানালেন সিদ্দিক হোসেন।

সিদ্দিকের গল্প আসলে উঠে আসার গল্প। ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়াশোনা হয়নি। ২০০৩ সালের দিকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন। দালালচক্র তাঁর টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। একপর্যায়ে ব্র্যাক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে বিকল্প নার্সারি নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন। নার্সারি থেকে তাঁর বেশ আয় হতে থাকে। ২০০৯ সালে তিনি নার্সারির মালিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি আগাম টক বরই চাষে মনোযোগী হন।

সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, সিদ্দিক হোসেন একজন সফল বরইচাষি। তাঁর সাফল্য দেখে সখীপুরে শতাধিক ব্যক্তি বরইচাষ করছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সফলও হয়েছেন।