এক মাসেও ধান সংগ্রহ নেই

নেত্রকোনা জেলায় আমন ধান কাটা এখন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এখনো অনেক উপজেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়নি। এতে হতাশ চাষিরা। গত মঙ্গলবার মদন উপজেলার উচিতপুর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনা জেলায় আমন ধান কাটা এখন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এখনো অনেক উপজেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়নি। এতে হতাশ চাষিরা। গত মঙ্গলবার মদন উপজেলার উচিতপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত সময়ের এক মাস চলে গেলেও নেত্রকোনায় ১০ উপজেলার মধ্যে ৬টিতে এখনো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি। গত ২০ নভেম্বর থেকে এই অভিযান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কৃষকদের তালিকাই চূড়ান্ত করতে পারেনি ৬ উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর। এতে হতাশ সেখানকার চাষিরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় এবার ১০টি উপজেলার ১৩টি খাদ্যগুদামে ১৩ হাজার ৫২ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এ ছাড়া ১১ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ২৩১ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করার কথা। এর মধ্যে সদরের খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, ঠাকুরাকোনায় ৫০৪ মেট্রিক টন, বারহাট্টায় ৭০০ মেট্রিক টন, বাউসীতে ৪৮৩ মেট্রিক টন, জারিয়ায় ৬০৭ মেট্রিক টন, পূর্বধলায় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, মোহনগঞ্জে ৯৬৮ মেট্রিক টন, কেন্দুয়ায় ১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ১ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন, মদনে ১ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন, আটপাড়ায় ৯১১ মেট্রিক টন, কলমাকান্দায় ১ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন ও খালিয়াজুরিতে মাত্র ১২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে।
এই ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা, সেদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘোষিত সময়ের এক মাস চলে গেলেও ছয় উপজেলায় ধান কেনা শুরু হয়নি। গতকাল পর্যন্ত পূর্বধলায় মাত্র ৭ মেট্রিক টন ও কেন্দুয়ায় ৩ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। আর বারহাট্টায় ও মোহনগঞ্জে ধান কেনা শুরু হয়েছে গতকালই।
এ অবস্থায় চরম বিপদে আছেন অন্য উপজেলার কৃষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, খাদ্য বিভাগ কখন কীভাবে ধান সংগ্রহ করে, তার কিছুই আসলে কৃষকেরা জানেন না। এ নিয়ে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণাও নেই। খাদ্য বিভাগের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন মিলে নিজেরাই ধান সংগ্রহের কাজটি করেন। এখানে কার্যত কৃষকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ধান সংগ্রহের নামে আসলে যা হয়, তা কিছু লোকের ভাগ-বাঁটোয়ারা ছাড়া আর কিছু না। এ ছাড়া আমনের মৌসুমে ধানের বরাদ্দ ও চালের বরাদ্দ প্রায় সমান থাকায় কৃষকদের তেমন লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে খাদ্য বিভাগ তাদের ব্যর্থতা মানতে নারাজ। তারা বলছে, যেসব কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়, সেই তালিকাটি মূলত কৃষি বিভাগ করে থাকে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর কৃষি বিভাগ সুবিধাভোগী এসব কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি। তাই এই অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।
দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু বক্কর সিদ্দিক, মদন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইলিয়াস আহম্মেদ ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জয়নাল আবেদিন জানান, কৃষি বিভাগ যেদিন লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য বিভাগকে হস্তান্তর করবে, সেদিন বা তার পরদিন থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সুবিধাভোগী কৃষকদের তালিকা প্রায় শেষের দিকে। দ্রুত খাদ্য বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে।’
এখনো ধান কেনা শুরু না হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকেরা হাটবাজারে ও মহাজনদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা প্রতি মণ ধান ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন। এই দরে ধান বিক্রি করে কৃষকের লোকসান হচ্ছে।
দুর্গাপুরের গাভিনা গ্রামের কৃষক দীপক সরকার বলেন, এখন কৃষকের কাছে ধান আছে। কিন্তু আর কয়েক দিন পর এই ধান তাঁদের হাতে থাকবে না। ধান চলে যাবে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের হাতে। কারণ, প্রান্তিক কৃষকেরা মহাজনসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। তাঁরা মৌসুমের শুরুতেই ঋণ পরিশোধের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তাই তাঁরা এখন কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।