আ. লীগের সম্মেলনে আজ নেতা নির্বাচনের পালা

পায়রা উড়িয়ে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা  উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।  ছবি: বাসস
পায়রা উড়িয়ে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ছবি: বাসস

প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এবার নেতা নির্বাচনের পালা। বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের উদ্বোধনী পর্ব শেষ হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় বসবে অধিবেশন পর্ব। এই পর্বেই নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে। তবে নতুন কমিটিতে কারা থাকছেন, আর কারা বাদ পড়ছেন, এ নিয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত অন্ধকারে নেতারা। ফলে আজ বিকেল পর্যন্ত পদপ্রত্যাশীদের উৎকণ্ঠা থাকবে।

আগত কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা পরবর্তী সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কাউকে ভাবছেন না। সবাই তাঁকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একবাক্যে সমর্থন দেবেন। সাধারণ সম্পাদকসহ ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি ৮০ পদের মধ্যে কার কী অবস্থান হবে, সেটা পুরোপুরিই দলীয় সভাপতির ওপর নির্ভর করছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পরবর্তী কমিটি নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। বৃহস্পতিবার দিনভর, এমনকি গতকাল সকালেও দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান। কিন্তু অধিকাংশ নেতাই সাক্ষাৎ পাননি। কেউ কেউ সাংগঠনিক মর্যাদার কারণে সাক্ষাৎ পেলেও নতুন কমিটিতে নিজের অবস্থান কী হবে, তা জানতে পারেননি। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকবেন, নাকি নতুন কাউকে নির্বাচন করা হবে—এ বিষয়েও কিছু বলেননি দলীয় প্রধান।

২০১৬ সালের সম্মেলনের তিন-চার দিন আগেই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জায়গায় ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখার কথা জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এবার শেষ মুহূর্তেও এ ব্যাপারে চুপ থাকায় নানা ব্যাখ্যা করছেন দলের নেতারা। কেউ কেউ মনে করেন, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হবে না বলেই কোনো বার্তা দিচ্ছেন না দলীয় প্রধান। কারও কারও মতে, দলীয় প্রধান কাউন্সিলরদের মনোভাব বুঝে হয়তো শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এতে চমকে দেওয়ার মতো কিছু থাকলেও থাকতে পারে।

>

আওয়ামী লীগের সম্মেলন
নতুন কমিটিতে কারা থাকছেন, কারা বাদ পড়ছেন, নেতারা কিছু জানেন না

তবে দলের নেতাদের বড় অংশই মনে করে, সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীতে এবার অনেক নতুন মুখ আসছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পেতে পারেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমানকেও সভাপতিমণ্ডলীতে নেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। সম্পাদকমণ্ডলীর একটা বড় অংশই এক দশক ধরে দায়িত্বে আছেন। ফলে তাঁদের কেউ কেউ বাদ পড়বেন। কারও কারও পদোন্নতি হতে পারে।

কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকজন নারীনেত্রীর অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ ফজিলাতুন্নেছা ও মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রওশন জাহান কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন। নির্বাহী সদস্য থেকে পদোন্নতি পেতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সাংসদ সিমিন হোসেন। সাবেক কয়েকজন ছাত্রনেতা, পেশাজীবী ও প্রয়াত নেতার ছেলেকে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক বা নির্বাহী সদস্য করা হতে পারে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ের সমন্বয়কারী সেলিম মাহমুদ, নিজামউদ্দিন জলিল ও মাইন উদ্দিন হাছান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে আজ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর কিছু সদস্য ও কয়েকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হতে পারে। বাকি পদগুলো পরে পূরণ করা হবে।

সম্মেলনে নেতা নির্বাচন পর্বে প্রথমে নতুন গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ, সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডও গঠন করা হতে পারে।

কীভাবে নেতা নির্বাচন
সাধারণত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকলে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদেই কেউ প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। ফলে রেওয়াজ অনুযায়ী, কাউন্সিলরদের সম্মতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এই দুই পদ ঠিক হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব কাউন্সিলররা সভাপতিকে দিয়ে দেন। আজও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নির্বাচনের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান ও সাইদুর রহমান। প্রথমে বর্তমান কমিটির নেতারা সভা করে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করবে। এরপর সবাই কাউন্সিলরদের সারিতে চলে আসবেন। মঞ্চে বসবেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। এরপর শুরু হবে নেতা নির্বাচনের কার্যক্রম।