এলাকায় যেতে পারেন না সেই ইলিয়াস নোমান

ইলিয়াস নোমান
ইলিয়াস নোমান

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ইলিয়াস নোমান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা কমিটির সদস্য। দল ক্ষমতায় থাকলেও বিপদে আছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা​। সাড়ে তিন মাস আগে নিজ দলের একদল নেতা–কর্মী তাঁকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। প্রাণে বাঁচলেও সেই হামলায় একটি হাত হারান তিনি।

চিকিৎ​সা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ‘খুন হয়ে যেতে পারেন’—এই ভয়ে এখন এলাকায় যেতে পারেন না ই​লিয়াস। তিনি জানালেন, এলাকায় গেলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন হামলাকারীরা।

ইলিয়াস নোমান আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভালুকায় থাকতেন। সেখান থেকেই বাড়িতে আসা–যাওয়া করতেন। এখন সেটাও বন্ধ। সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরে তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এত বড় একটি ঘটনা এখনো কোনো বিচার হয়নি। আসামিরাও জামিন নিয়ে এলাকায় দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।’ ইলিয়াস বলেন, তাঁর শিশুকন্যা নওশীন তাঁর কেটে ফেলা হাতটি দেখিয়ে বলে, ‘আব্বু তোমার হাত কবে হবে?’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গফরগাঁওয়ে অনেক দিন ধরেই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সেটা আরও বেড়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ইলিয়াস নোমানের ওপর হামলা হয়েছিল গত ২ সেপ্টেম্বর। সাড়ে তিন মাস পর খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আসামিরা আছেন জামিনে। শুরুতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে ছিল গফরগাঁও থানা-পুলিশ। ইলিয়াস নোমানের আপত্তির মুখে পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। এখন তদন্ত কর্মকর্তা হলেন ডিবির উপপরিদর্শক মো. আবদুল জলিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত এখনো চলছে। তিনি মেডিকেল রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন। সেটা পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

>

নিজ দলীয় লোকদের হামলায় এক হাত হারান স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা
এখন দিন কাটে প্রাণ হারানোর শঙ্কায়

মামলার বিবরণ ও ইলিয়াস নোমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বাড়ি গফরগাঁও উপজেলার গফরগাঁওয়ের যশোরা ইউনিয়নের যশোরা গ্রামে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ব্যবসাও করেন। তাঁর ওপর হামলার আগে তাঁদের পার্শ্ববর্তী খোদাবক্সপুর গ্রামে সরকারিভাবে বিদ্যুৎ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই কাজে ইলিয়াস সহযোগিতা করেন। কিন্তু এটি মানতে পারেননি স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের একদল নেতা-কর্মী। কারণ, তাঁরা বিদ্যুৎ–সংযোগের নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে আগে একবার টাকা নিয়েছিলেন। আবার নতুন করে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু টাকা ছাড়াই ইলিয়াসের সহযোগিতায় ওই গ্রামে বিদ্যুৎ​–সংযোগ দেওয়া হয়। এতে ইলিয়াসের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করেন যুবলীগের ওই নেতা-কর্মীরা।

 ইলিয়াসের অভিযোগ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম ওরফে সুমনের নেতৃত্বে ৯ ব্যক্তি তাঁর ওপর হামলা করেন। তাঁকে প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎ​সকেরা তাঁর বাঁ হাত রক্ষা করতে পারেননি। হাতটি কেটে ফেলতে হয়। এই ঘটনায় ইলিয়াসের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। 

ইলিয়াস নোমান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা এর আগেও এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন। কিন্তু বিচার হয়নি। এ জন্য তিনি শঙ্কিত।