গায়ে আগুন দেওয়ার পাঁচ দিন পর মৃত্যু, স্বামী-শ্বশুর গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দীর্ঘদিন ধরে খাদিজা আক্তারের (২০) কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। টাকা দিতে না পারায় নানা সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে তাঁকে। ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খাদিজার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আজ শনিবার ভোরে মারা গেছেন খাদিজা।

ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার গদাইচর এলাকায়। এই ঘটনায় শনিবার বিকেলে নিহত গৃহবধূর বাবা মো. কাজল মিয়া বাদী হয়ে খাদিজার স্বামী-শ্বশুর ও দুই দেবরকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার পর খাদিজার স্বামী মো. বিপ্লব মিয়া ও শ্বশুর দুলা মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খাদিজার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে খাদিজার সঙ্গে বিপ্লবের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন খাদিজাকে তিন লাখ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দরিদ্র বাবার কাছ থেকে এত টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁকে নানা সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। সাত মাস বয়সী মেয়ের কথা ভেবে সব নির্যাতন সহ্য করতেন খাদিজা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে আবার যৌতুকের জন্য খাদিজাকে চাপ দেওয়া হয়। টাকা দিতে অপারগতা জানালে স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর তাঁকে কিল-ঘুষি মেরে জখম করেন। এ সময় শ্বশুর দুলা মিয়া খাদিজার কাপড়ে কেরোসিন ঢেলে দেন। পরে স্বামী বিপ্লব পকেট থেকে দেশলাই বের করে খাদিজার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় খাদিজার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভান। প্রতিবেশীরা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত খাদিজার বাবা ও মামলার বাদী মো. কাজল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌতুকের টাকা দিতে পারিনি বলে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই নিহত খাদিজার স্বামী মো. বিপ্লব মিয়া ও শ্বশুর দুলা মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।