র‍্যাব পরিচয় দিয়ে ডাকাতির মামলায় দুজনের স্বীকারোক্তি

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করার অভিযোগে ওয়ারী থানায় করা মামলায় দুই আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁরা এই জবানবন্দি দেন।

দুই আসামি হলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর গ্রামের ইব্রাহীম গাজীর ছেলে রিপন গাজী (২৯) এবং রাজবাড়ী সদরের বাগমারা গ্রামের অলিউল্লাহ মিজির ছেলে মুক্তার হোসেন (২৫)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশীদ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাব-১০ এর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করার অভিযোগে গত বুধবার শফিউল আলম আজাদ নামের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত ৫-৬ জন ডাকাতকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলায় শফিউল আলম বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। ওয়ারীর ভজহরী সাহা স্ট্রিটের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। গত ৫ ডিসেম্বর মাদারীপুরে যাওয়ার জন্য সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধু সিয়াম উদ্দিন ও ভাগনে মাহমুদুল হাসান এবং সাড়ে ৫ লাখ টাকা। ওয়ারীর টিপু সুলতান সড়কের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি দোকানের সামনে ৫-৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি মাইক্রোবাসে করে এসে নিজেদের র‍্যাব-১০ এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি সাদা কাগজ দেখান বাদী শফিউলকে। সেই কাগজে লেখা ছিল একটি মোবাইল ফোন নম্বর। অজ্ঞাত সেই লোক তাঁকে জানায়, কাগজে যার ফোন নম্বর লেখা তাঁকে ধরতে হবে। তখন লোকটি তাঁর মোবাইল ফোনে বাদী শফিউলের ছবি দেখান।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, অজ্ঞাত সেই অস্ত্রের মুখে তাঁদের মাইক্রোবাসে উঠতে বাধ্য করে। বাদীকে বসতে দেওয়া হয় গাড়ির চালকের ঠিক পেছনে। তাঁর সঙ্গে বসা ছিল দুই ব্যক্তি। আর মাইক্রোবাসের একেবার পেছনে সিয়াম ও মুন্নাকে বসায়। চালকের পাশে যে ব্যক্তি বসে ছিলেন, গাড়িতে থাকা অন্যরা তাঁকে স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন। তাঁর কাছে পিস্তল, হাতকড়া ও ওয়াকিটকি ছিল। গাড়িতে ওঠানোর পর তাঁদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ডেমরা এলাকার দিকে। সেখানে ঘোরাঘুরি করার পর তাঁদের দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের হাত-পা, চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ছনবাড়ী এলাকায়। রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে তাঁদের ঢাকা-মাওয়া সড়ক এলাকার একটি নির্জন স্থানে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। বাদী শফিউলের কাছে থাকা নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা, মোবাইল ফোন, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, বাদীর বন্ধু সিয়াম ও ভাগনে মাহমুদুলের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।

মামলার বাদী শফিউল আলম বলেন, নামিয়ে দেওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, ডাকাতরা মুন্সিগঞ্জের নিমতলা এলাকায় নামিয়ে দেয়। ডাকাতদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে ছিল।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, এই মামলায় হাজারীবাগ এলাকার রায়েরবাজার থেকে একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে ওয়ারী থানা-পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

তদন্ত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে দুজন ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁরা চালক। এই ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত।

র‍্যাব সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম কোনো ঘটনার বিষয়ে তাঁদের কাছে তথ্য নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে।