উদ্বোধনের জন্য তোড়জোড়

ওসমানী উদ্যানে অসমাপ্ত স্থাপনা। সাম্প্রতিক ছবি।  প্রথম আলো
ওসমানী উদ্যানে অসমাপ্ত স্থাপনা। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

সংস্কারকাজ পুরোপুরি শেষ না করে উদ্বোধন করা হয় বাসাবো মাঠ। তড়িঘড়ি করে উদ্বোধনের কারণে মাঠটির সবুজ ঘাস বিবর্ণ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকে মাঠটি, দিনে খোলা থাকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। এতে এলাকাবাসী মাঠের পুরো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবার বাসাবো মাঠের মতো সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগেই ওসমানী উদ্যান–গোসসা নিবারণী পার্ক উদ্বোধনের তোড়জোড় চলছে বলে জানা গেছে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে উদ্যানটির সংস্কারকাজের উদ্বোধন করা হয়। নগরবাসীর ‘রাগ প্রশমনের’ সুযোগ সৃষ্টিতে উদ্যানে বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা যোগ করার কথা জানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কাজের যে গতি তাতে শেষ হতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে। কিন্তু চলতি মাসের মধ্যেই পার্কটি উদ্বোধন করতে চায় ডিএসসিসি।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের আগে উন্নয়ন দেখাতে খেলার মাঠ, পার্কসহ নানা অবকাঠামোর উদ্বোধন করা হচ্ছে। আর এসব প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রূপ নিচ্ছে ‘নির্বাচনী প্রচারে’। এরই অংশ হিসেবে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ওসমানী উদ্যান–গোসসা নিবারণী পার্কের উদ্বোধনেরও পরিকল্পনা চলছে।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, উদ্যানের সংস্কারকাজে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হয়। পার্কের সংস্কার কাজ করছে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে ৪০ কোটির বেশি টাকা তুলে নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যানটি ডিএসসিসির মেয়রের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল। ইতিমধ্যে কয়েকটি খেলার মাঠ ও পার্কের উদ্বোধন হলেও এই পার্ক উদ্বোধনের উপযাগী না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন সাঈদ খোকন। মেয়রের এমন মনোভাবের কারণে প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান তড়িঘড়ি করে পার্কের উদ্বোধনে তোড়জোড় শুরু করেছেন। প্রায়ই তিনি পার্কের কাজ দেখতে যাচ্ছেন। কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে পার্কটির উদ্বোধন করার চিন্তাভাবনা করছেন। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কটির চারপাশে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। বাইরে কয়েকটি সাইনবোর্ডে লেখা প্রবেশ নিষিদ্ধ। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ছাড়া কারও সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা।

পার্কের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে মো. আসাদুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এমনকি দপ্তরে গিয়েও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্সের একজন কর্মকর্তার দাবি, ইতিমধ্যে তাঁরা উদ্যানের ভেতরের শরীরচর্চা কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। নগর জাদুঘরের অবকাঠামোর নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কফি শপের নতুন নকশা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। হাঁটার পথ ও বসার স্থান তৈরির কাজ শেষ। এ ছাড়া ‘রাগ কমাতে’ পানিতে পা রাখার জন্য পুকুরপাড়ে বসার জন্য অবকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। চলতি মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নিলেও ঠিকভাবে কাজ করেনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ফজলুল করিম চৌধুরী শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর তিনি দেশের বাইরে চলে যান। এই পার্কের সংস্কারকাজের যে অবস্থা, তা দ্রুত শেষ করার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সম্প্রতি ফজলুল করিম চৌধুরী দেশে ফিরলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যানের নকশাকার স্থপতি রফিক আজম প্রথম আলোকে বলেন, গোসসা নিবারণী পার্কের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এই কাজ নিয়ে তিনি খুবই হতাশ। লিখিতভাবে তিনি বিষয়টি ডিএসসিসিকে জানিয়েছেন।

ডিএসসিসির মেয়র গোসসা নিবারণী পার্কের সংস্কারকাজে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্কের সংস্কারকাজ এখনো চলছে। আশা করছি, খুব শিগগির শেষ করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, এখনো কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাতে পাননি। পেলে উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হবে।