সারা বছর মশা মারার নির্দেশ

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত ২১ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৩ জন, যা আগের বছরগুলোর ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বছরই কমবেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। কিন্তু মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকারি সংস্থাগুলোর গা–ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ১২ ডিসেম্বর এক চিঠিতে মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বছরব্যাপী মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ নিয়ে আজ রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মৌসুম ছাড়া এখন অন্য সময়েও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকছে। সে জন্য বছরব্যাপী নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

সরকারি হিসাবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৯০ জন। এর আগে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর সর্বোচ্চ। চলতি বছর সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৪১ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি।

>

গত তিন বছরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু কমবেশি সারা বছরই ছিল। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় জুলাইয়ের শুরুতে ঢাকায় ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আগস্টের মাঝামাঝি ঈদুল আজহার ছুটির সময় ঢাকা থেকে যাওয়া মানুষের সঙ্গে সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। শুধু আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৫২ হাজার ৬৩৬ জন।

ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়। দুই বেলা ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রমে যে গতি ছিল, তা এখন অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে।

রাজধানীর বাসিন্দারা বলছেন, প্রকোপ শুরুর পর মাঝখানে কিছুদিন প্রায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হতো। তবে কিছুদিন ধরে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে এসেছে। মশকনিধনকর্মীদের আগের মতো ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না। ঢিমেতালে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এ সুযোগে কিউলেক্স মশার উপদ্রবও বেড়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মশকনিধনে বছরব্যাপী একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে সেগুলো ধ্বংসের কাজ চলছে। খালগুলো মশার বড় প্রজননক্ষেত্র। খাল পরিষ্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে, এ সময়কে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম বলা হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত তিন বছরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কমবেশি সারা বছরই ডেঙ্গু ছিল। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ১২৬ জন এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৯৩ জন আক্রান্ত হয়েছিল এ রোগে। আর গতকাল শনিবার পর্যন্ত এই ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৩ জন। গতকালও ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১০৯ জন।

এমন পরিস্থিতিতে ১২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-১ শাখা থেকে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, সিটি করপোরেশনগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা না করায় ডেঙ্গুর প্রকোপ পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এডিস মশার পাশাপাশি কিউলেক্স মশার প্রকোপও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে। মশকনিধন কার্যক্রমের তথ্য ও ছবি প্রতিদিন এই গ্রুপে দাখিল করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় এ বছর শীতেও ডেঙ্গু আছে। এডিস ও কিউলেক্স মশা নিধনের জন্য আলাদা আলাদা কর্মসূচি বছরব্যাপী চালাতে হবে।