এক সপ্তাহ শিশু ওয়ার্ড বন্ধ

ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ড বন্ধ। রোগীশূন্য ওয়ার্ডের ছবিটি গতকাল তোলা।  প্রথম আলো
ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ড বন্ধ। রোগীশূন্য ওয়ার্ডের ছবিটি গতকাল তোলা। প্রথম আলো

শনিবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিট। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৪ মাসের শিশু সফর উদ্দিনকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। ভর্তি রেখে সেবা নেওয়ার পরামর্শ ছিল চিকিৎসকের। তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তিও করানো হয়। শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ডে না রেখে শয্যা দেওয়া হয় নারী ওয়ার্ডে। বড়দের সঙ্গে রাখায়, বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের পছন্দ হয়নি। শেষে কাউকে কিছু না বলেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন সফরের পরিবারের সদস্যরা। সফর উদ্দিন পৌর শহরের কালিপুর এলাকার আরিফ মিয়ার ছেলে।

নারী ওয়ার্ডে রাখার কারণ জানতে চাইলে শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সবিতা রানী বলেন, শিশু বিভাগের সার্জন দিদারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে হাসপাতালে নেই। এরপর ওয়ার্ড চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীও কমতে থাকে। এ কারণে এক সপ্তাহ আগে থেকে শিশু ওয়ার্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যে দু-চারটা ভর্তিযোগ্য শিশু আসে, তাদের বড়দের সঙ্গে রাখা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার। এর মধ্যে পৃথক শিশু ওয়ার্ডও রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ১৪। চাহিদার কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় আরও ৬টি শয্যা বাড়িয়ে ২০–এ উন্নীত করা হয়। এ হাসপাতালে ভৈরবের পাশাপাশি লাগোয়া কুলিয়ারচর, অষ্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নরসিংদীর বেলাব উপজেলার অনেকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে রোগীর সংখ্যা ৫৫০। শিশু ওয়ার্ডটি সব সময় পূর্ণ থাকে। কখনো কখনো বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে বারান্দায় অতিরিক্ত শয্যা ফেলতে হয়। আবার মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পর থেকে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলেও কর্তৃপক্ষ কৌশলে ভর্তি এড়িয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো, যথাযথভাবে শিশু ওয়ার্ড পরিচালনা করতে হলে লোকবল প্রয়োজন। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জরুরি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদটি শূন্য হওয়ার পর আর পূরণ হয়নি। এ কারণে ওয়ার্ড বন্ধ রেখে বড়দের সঙ্গে শিশুদের রেখে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা হচ্ছে। এ কারণে অনেক অভিভাবক হাসপাতালবিমুখ হয়ে পড়ছেন।

গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার মধ্যে ৭৪টি শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে ১৪টি এবং ডায়রিয়ায় ৫টি। ৩১ নম্বর কক্ষে বসে সেকমো জেসমিন আক্তার শিশুদের চিকিৎসা দেন।

জেসমিন আক্তার বলেন, শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় রোগী কিছু কমেছে। আবার শিশু ওয়ার্ডে সমস্যা থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র লিখে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্তর্বিভাগের নার্স কক্ষ সূত্র জানায়, আগে যেখানে শিশু ওয়ার্ডের সব শয্যা পূর্ণ থাকত, সেখানে গতকাল ভর্তি ছিল মাত্র চারজন। এর মধ্যে একজন কাউকে কিছু না বলেই হাসপাতাল ছাড়ে।

বড়দের সঙ্গে শিশুরা কেমন আছে—তা দেখতে একজন নার্সের সহযোগিতা নিয়ে নারী ওয়ার্ডে যান এ প্রতিবেদন। সেখানে দেখা যায়, ৯ বছরের শিশু চয়ন দাসকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চয়নের মা দুর্গা রানী দাস বলেন, বড়দের সঙ্গে ছোটদের রাখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে না। বড়দের কথাবার্তার ধরন ভিন্ন, যা ছোটদের জন্য শোনাটা একটা সমস্যা। চয়ন পৌর শহরের চণ্ডীবের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা।

১০ বছর বয়সী শিশু শাবনুর নারী ওয়ার্ডে আছে মঙ্গলবার থেকে। শিশুটির মা শিখা বেগম বলেন, ‘কী আর বলব। শিশুদের শিশু ওয়ার্ডে রাখার কথা। আইসা শুনলাম ওয়ার্ড বন্ধ। পরে এখানে দিল। সবই সমস্যা।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ বলেন, শিশু ওয়ার্ড বন্ধ থাকলেও চিকিৎসা বন্ধ নেই। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদটি শূন্য থাকায় রোগীর সংখ্যা কমেছে। পদ পূরণের জন্য ইতিমধ্যে তিনি স্থানীয় সাংসদ নাজমুল হাসানের সই নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। পদটি পূরণ হলে ফের শিশু ওয়ার্ড সচল হবে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান সবকিছু শুনে বলেন, ওয়ার্ড বন্ধ থাকার তো কথা নয়। শূন্য পদ পূরণ বিষয়ে তিনি বলেন, একটু ধৈর্য ধরতে হবে।