ফোন করলেই বাড়িতে হাজির ধানভাঙার কল

জমি থেকে কেটে আনা ধানের আঁটি বাড়িঘরের আঙিনার চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে। এক পাশে চলছে ধানমাড়াইয়ের কাজ, অন্য পাশে চলছে ধান সেদ্ধ ও শুকানোর পালা। গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থবাড়ির চিরাচরিত দৃশ্য এটি।

কিন্তু এই সেদ্ধ করা আর শুকানো ধান ভাঙানো নিয়ে ঝামেলা আর নয়। ফোন করে দিলেই গোটা চালকল বাড়িতে এসে হাজির। তারাই ধান ভাঙিয়ে চাল করে দেয়।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধানের বস্তা চালকলে নিয়ে ধান ভাঙিয়ে আবার চালের বস্তা বাড়িতে নিয়ে আসা অনেকটা ঝামেলা ও কায়িক শ্রমের বিষয়। অনেক সময় বিদ্যুৎ না থাকলে চালকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে অপেক্ষা করতে হয়। এসব খাতে রিকশাভাড়ার খরচ জোগান দিতে হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ চালকল থাকায় এখন আর এসব ঝামেলা পোহাতে হয় না। একটি কল দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

মেরাকোনা গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলী (৫৫) একটি ভ্রাম্যমাণ চালকলের মালিক। শাহ আলী জানান, তিনি গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে প্রতি মণ ধান ৪০ টাকায় ভাঙিয়ে দেন। তাঁকে ফোন করে দিলেই চালকল নিয়ে গৃহস্থের বাড়ি চলে যান। ধান ভাঙিয়ে চাল, খুদ ও কুঁড়া গৃহস্থকে বুঝিয়ে দেন। শাহ আলী সকাল থেকে সারা দিন ধান ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন।

শাহ আলীর ছেলে মো. রাজীব মিয়া (১৭) কৃষক মো. আলী নওয়াজের বাড়িতে বসে ধান ভাঙছিল। রাজীব জানায়, সে তার বাবাকে এই কাজে সহায়তা করে। শাহ আলীর দেওয়া হিসাবমতে, পাঁচ লিটার ডিজেল খরচ করে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান ভাঙানো যায়। তেল খরচ বাদ দিলে আয় হয় ৪৫০ টাকার বেশি। যত বেশি ধান ভাঙানো যায়, আয় তত বেশি হয়। এখন শুকনো মৌসুম থাকায় চালকল নিয়ে সহজেই বাড়ি বাড়ি যাওয়া যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে খুব সমস্যা হয়।

চালকলটি তৈরি করা হয়েছে চীনের তৈরি একটি ডিজেল ইঞ্জিন ও যান্ত্রিক জাঁতার সমন্বয়ে। ইঞ্জিন চালু করে যান্ত্রিক জাঁতা ঘোরানো হয়। সেই জাঁতায় ধান ফেললে চাল বের হয়ে আসে। চালকলটি লোহার একটি কাঠামোর ওপর বসানো হয়েছে। কাঠামোতে চাকা লাগানো আছে। ঠেলা দিলেই সেটি গ্রামের উঁচুনিচু রাস্তায় চলতে থাকে। এটি দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি।

মেরাকোনা গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক কৃষক জানান, সময় বদলে গেছে। আগে ধান নিয়ে দূরের কোনো বাজারে যেতে হতো ভাঙানোর জন্য। এখন ফোন দিলেই বাড়িতে চালকল চলে আসে। এতে গৃহস্থের শ্রম, সময় ও অর্থ বাঁচে।