সেতুটি কোনো কাজে আসছে না

সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। কলমাকান্দায় মাইজপাড়া-জয়নগর সড়কে মাইজপাড়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। কলমাকান্দায় মাইজপাড়া-জয়নগর সড়কে মাইজপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মাইজপাড়া-জয়নগর সড়কে মাইজপাড়া এলাকায় সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৮ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের পরপর বন্যা হওয়ায় দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে যায়। এরপর থেকে সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এতে যান চলাচলকারী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের মাইজপাড়া এলাকা থেকে জয়নগর হয়ে মনকান্দিয়া পর্যন্ত রাস্তার মাইজপাড়া এলাকায় আবদুল হেকিমের বাড়ির সামনের খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর পাশের জমির আইল দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে এলাকার লোকজনকে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে বড়খাপন, চৌহাট্টা, রানাগাঁও, বিষারা, গয়পুর, উদয়পুর, পোগলা, মনকান্দিয়া, জয়নগর, দুর্লবপুর, গুতমণ্ডলসহ অন্তত ১২ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

পাচুড়া গ্রামের মো. জালাল মিয়া, আব্দুর রহমান, রানাগাঁও গ্রামের আবদুল হাসিদসহ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেতুটি নির্মাণের ছয় মাস পর বন্যার পানিতে উভয় পাশের সংযোগ সড়ক ধসে যায়। এরপর থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে সেতু দিয়ে কোনো লোকজন চলাচল করতে পারছে না। শুকনো মৌসুমে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার সময় নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাঁরা দ্রুত সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

কলমাকান্দা সরকারি কলেজের প্রভাষক রূপণ সাহা বলেন, প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্কুল–কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী চলাচল করে। মাইজপাড়া সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় তাঁদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজনের ভোগান্তির অবসান হবে।

রানাগাঁও গ্রামের রিকশাচালক আফসার মিয়া বলেন, সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়কটি ভালো যখন ছিল, তখন ভ্যান-রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করা যেত। এখন আর এই রাস্তায় যানবাহন নিয়ে চলাচল করা যায় না।

উদয়পুর গ্রামের রহমত উল্লাহ বলেন, সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক থাকলে এ পথ দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারত। এতে তাঁদের ভোগান্তি কমত। এলাকার মানুষের জরুরি প্রয়োজনে হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এমনকি কেউ অসুস্থ হলে গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হয়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, ‘সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে আমি প্রকল্প কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করা যাচ্ছে এ সমস্যার সমাধান হবে।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশাদুজ্জামান বলেন, বন্যার সময় এলাকার কিছু লোক নৌকা পারাপারের জন্য সেতুর দুই পাশের মাটি কেটে নেন। যদি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বরাদ্দ দেন, তাহলে সংযোগ সড়ক করে দেওয়া হবে।

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মৌলা বলেন, সেতুটির দুই পাশে মাটি কাটার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের জমা দেওয়া হবে।