চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতার গুলি, স্কুলছাত্র গুলিবিদ্ধ

রাজবাড়ীর পাংশায় ছাত্রলীগ নেতার গুলিতে এক স্কুলছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় আরও তিনজনকে মারধর করা হয়। চাঁদা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এই গুলি ও মারধর করা হয় বলে আহত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ।

শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে রাতে আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার বিকেলে দুটি গুলিসহ পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ ছাত্রের নাম আজিম মণ্ডল (১৬)। আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন আজিমের বাবা আজু মণ্ডল (৫০), খালাতো ভাই মো. সেলিম (২৮) ও চাচাতো ভাই মাসুদ মণ্ডল (৩০)। আজিমসহ প্রথম তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আজিম মাছপাড়া বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা। একই গ্রামের বাসিন্দা আজু মণ্ডল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সেলিমের বাড়ি কলিমোহর ইউপির বসা কুষ্টিয়া গ্রামে।

ছাত্রলীগ নেতার নাম খন্দকার তাসবীর হাসান। তিনি পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবার নাম খন্দকার সাইফুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মাছপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান।

আহত ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সেলিমের কাছে মাস তিনেক আগে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চান ছাত্রলীগের নেতা তাসবীর। সেলিম ও আজিম খালাতো ভাই। এ ঘটনায় আজিমের বাবা তাসবীরের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলামের কাছে প্রতিকার চান। চেয়ারম্যান এ ঘটনায় তাঁর ছেলেকে বকাঝকা করেন। তারপর থেকে কিছুদিন চাঁদা চাওয়া বন্ধ ছিল। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুলতানপুর মোড়ে আজিমদের দোকানে আসেন সেলিম। কেনাকাটা করতে তাঁদের কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে তাসবীর ও তাঁর দুই সহযোগী উপস্থিত হন। তাঁরা কথা আছে বলে সেলিমকে ডেকে দোকান থেকে বাইরে নিয়ে যান। কিছু দূর নিয়ে তাঁকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় তাঁকে উদ্ধার করতে যান আজু মণ্ডল। তাঁকেও মারধর করা হয়। বাবাকে মারধর করা দেখে এগিয়ে যান আজিম। এ সময় আজিমকে গুলি করেন তাসবীর। একপর্যায়ে তাসবীর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ বেলা সোয়া তিনটায় তত্তিপুর ঈদগাহ মাঠ মক্তব থেকে দুটি গুলিসহ পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গুলিবিদ্ধ আজিমের চাচাতো ভাই অপু মণ্ডল (২২) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দোকানে বসে ছিলাম। এ সময় তাসবীর, রিংকু ও আরও একজন দোকানে উপস্থিত হন। আমার চাচা তাঁদের চা খেতে বলেন, কিন্তু তাঁরা সেলিমকে ডেকে নিয়ে চাঁদা দাবি করতে থাকেন। এ সময় তাসবীর ও রিংকু দুইজনের কাছেই পিস্তল ছিল। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে মারধর করতে থাকেন। পরে আমার চাচা ও ভাই এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। মারধর করতে দেখে আজিম এগিয়ে যায়। এ সময় তাকে তাসবীর গুলি করেন।’

পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তরুণ কুমার পাল আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আজিমের বাম হাতে গুলি লেগে বুকে বিদ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও খন্দকার তাসবীর হাসানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মাছপাড়ায় একটা ঝামেলার কথা শুনেছি। কিন্তু কে কাকে গুলি বা মারধর করেছে, তা জানি না।’

তাসবীরের বাবা খন্দকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঢাকাতে আছি। তবে আমার ছেলের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা।’


পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ বলেন, গুলি করার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে রোববার বেলা তিনটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।