ঢাবিতে হামলায় আহত ফারাবীর অবস্থা অপরিবর্তিত

তুহিন ফারাবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
তুহিন ফারাবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার শিকার হওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা তুহিন ফারাবীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফারাবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ফারাবীর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তাঁর সংগঠনের নেতারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া আজ সোমবার সকাল পৌনে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারাবীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা রাশেদ খান আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল আটটার দিকে ফারাবী চোখ মেলেছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার চোখ বন্ধ করেন। অন্যদিকে, নুরুল হকের অবস্থা আগের মতো রয়েছে। 

ফারাবী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হককে তাঁর কক্ষে ঢুকে আলো নিভিয়ে পেটান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এই মঞ্চের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ৩০ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁদের মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

ঘটনার সময় হামলাকারীরা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। সুহেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কয়েক দফা মারধরের শিকার হন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাবী। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, আহত দুজনেরই অবস্থা সংকটাপন্ন।

এ ছাড়া হামলায় আহত নুরুলের ভাই আমিনুর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই দফায় নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ডাকসু ভবনে ঢুকে তাঁদের পেটান। এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হুসাইন ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারধর করা হয়। এ সময় ডাকসু ভবনেও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী।

ডাকসু ভবন থেকে মিনিটখানেকের হাঁটা দূরত্বে কলাভবনের নিচতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই মারধরের সময় প্রক্টর গোলাম রব্বানী তাঁর কার্যালয়েই ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে যান মারধর শেষ হওয়ার পর। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনিসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।

ডাকসুর ভিপি হওয়ার আগে এবং পরে ৯ বার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হলেন নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীরা। এর মধ্যে পাঁচবার হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায়। তবে একটি ঘটনায়ও হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসুর সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, সঞ্জিত ও সাদ্দামের প্রত্যক্ষ মদদে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

তবে হামলার কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হুসাইন প্রথম আলোকে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ডাকসু ভিপি নুরুল হকের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মধ্যকার ধারাবাহিক বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তাঁরা জানেন না।

যদিও আমিনুল হেলমেট পরে লাঠি হাতে হামলায় অংশ নেন। আর সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের প্রতিহত করেছেন ৷

গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের দেখতে যান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান। এরপর রাতে তাঁদের দেখতে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ সময় তাঁরা হাসপাতালে জড়ো হওয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। নুরুলসহ অন্যদের সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার সময় তাঁরা বলেন, যে মঞ্চের নামেই হামলা করা হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।