আত্মকর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

অধ্যাপক সেলিম রায়হান
অধ্যাপক সেলিম রায়হান

গত এক দশকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বেড়েছে। কিন্তু কয়েকটি শ্রম জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। এতে উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, বিপুলসংখ্যক তরুণ না আছে শিক্ষায়, না আছে কর্মসংস্থানে, না আছে কোনো প্রশিক্ষণে। ফলে তাঁরা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে দেশে বেকারত্বের হার সাড়ে ৪ শতাংশ, যেখানে শিক্ষিত বেকারের হার ১০ শতাংশের ওপরে।

যে তরুণেরা কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষায় নেই, তাঁদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। তাই নারীর জন্য কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ বলতে আমরা শহরের শিক্ষিত তরুণদেরই বুঝি। যদিও গ্রামের অনেক তরুণ এখনো শিক্ষাদীক্ষা থেকে দূরে আছেন। তাঁদেরও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে।

২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন বা ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে তরুণদের অর্থনীতিতে কার্যকরভাবে যুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। এখানে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে জোর দেওয়া দরকার, সেটা হলো দেশের জনসংখ্যাগত সুবিধা কাজে লাগানো। দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। কিন্তু আগামী এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে এই সুবিধা শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যে তরুণদের দক্ষতা যদি বাড়ানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির যে ধারা, তা ব্যাহত হবে।

তরুণেরা যদি তাঁদের যোগ্যতার তুলনায় কম কাজ পান, তাহলে তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। এতে সমাজের শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা যুগোপযোগী নয়। কর্মক্ষেত্রের জন্য যে ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তা দিতে পারছে না।

তরুণদের সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ আছে। পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের কথাও ভাবতে হবে তাঁদের। আমাদের তরুণদের মধ্যে শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। এ ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা একধরনের সমাধান দিতে পারে। তরুণদের নিজ উদ্যোগে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। বর্তমানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ আছে। এটি ব্যবহার করে তরুণদের জানতে হবে, আগামীর পৃথিবী কী ধরনের দক্ষতা চাইছে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের তৈরি করতে হবে।