ওরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুখর হয়ে আছে সরালি পাখির কলকাকলিতে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পুকুরে।  ছবি: শহীদুল ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুখর হয়ে আছে সরালি পাখির কলকাকলিতে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পুকুরে। ছবি: শহীদুল ইসলাম

গাছপালায় ঘেরা ক্যাম্পাসে এমনিতেই হরেক রকমের পাখির আবাসস্থল। এদের সঙ্গে প্রতিবছর শীতের সময়ে যোগ দেয় ভিনদেশি অতিথি। থাকে কয়েক মাস। এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নভেম্বর মাস থেকেই আসা শুরু করেছে এই পাখিগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট–বড় পুকুরগুলোতে এদের আনাগোনা রাত পোহালেই শুরু হয়। ওড়াউড়ি, ঝাঁপাঝাঁপি, এ গাছ থেকে ও গাছে, একটু পরই পানিতে, আবার উড়ছে আকাশে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেন পাখিদের মেলা বসেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের পেছনের পুকুর, তাপসী রাবেয়া ও রহমতুন্নেছা হলের পেছনে ফিশারিজ বিভাগের গবেষণা পুকুরসহ ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি জলাশয়ে আসর বসিয়েছে অতিথি পাখিরা। আকাশজুড়ে পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। কলকাকলিতে মেতে উঠছে। পাখিদের কলকাকলি, ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ আর খুনসুটিতে মুখর হয়ে উঠছে পুরো ক্যাম্পাস। 

পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। এসব অঞ্চলে শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশেও আসে। তার মধ্যে কয়েক বছর ধরে এ পাখির দেখা মিলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

এ বছর এ ক্যাম্পাসে বেশিসংখ্যক পাখিই ছোট সরালি। বাকি পাখির মধ্যে রয়েছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জাহাঁস, খুন্তেহাঁস, ভূতিহাঁস, ঝুঁটিহাঁস ইত্যাদি। দুই বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে পেরিগ্রিন ফ্যালকন নামের আরেক পাখি। তাঁরা প্রায় পাঁচ মাস ক্যাম্পাসে থাকে। এরা ছোট ছোট পাখি, বড় মাছ, সাপ, ইঁদুর খেয়ে থাকে। আর অন্যরা ছোট মাছ ও পোকামাকড় খায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাখি দেখতে যায় ক্যাম্পাসের এই পুকুরগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এ বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ভর্তি হওয়ার সময় এসেই এই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর চোখে ভালো লেগেছে। এখন প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগে তিনি ক্যাম্পাস ভালোভাবে ঘুরে দেখছেন। জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখিদের দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত। 

তবে এসব পাখিকে অতিথি পাখি না বলে পরিযায়ী পাখি বলাই উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্ রেজা। পাখি নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পাখিদের প্রতি লক্ষ রাখছেন। আমিনুজ্জামান বলেন, নভেম্বরের শেষ দিকে এই পাখিগুলো এখানে আসে। আগের বছরের চেয়ে এবার পাখির সংখ্যা বেশি। তার অভিযোগ, অনেকেই ঢিল ছুড়ে উড়ন্ত পাখির ছবি তুলছে। এতে পাখিরা বিরক্ত হচ্ছে। পাখিদের অভয়ারণ্য না দিতে পারলে তাঁরা আর আসবে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এখানে পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও প্রজননের ব্যবস্থাও আছে। পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। পাখিদের সুরক্ষার জন্য শিগগিরই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙানো হবে।