সাঁওতাল হত্যা মামলাটি নতুন করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা মামলার বাদী থোমাস হেমব্রমের নারাজি আবেদন আজ সোমবার মঞ্জুর করা হয়েছে। সে সঙ্গে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ বিকেলে শুনানি শেষে গোবিন্দগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে এ নির্দেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম ও মুরাদজ্জামান এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁরা খুশি। এখন নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে।

এদিকে নারাজির আবেদন মঞ্জুর হওয়ার খবর শুনে সাঁওতালরা আদালত-সংলগ্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। তাঁরা মিছিলে অন্যান্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্লোগান দেন।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ চিনিকলের বাণিজ্যিক খামারে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। সাঁওতালদের পক্ষে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা করেন।

পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে গাইবান্ধার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। পিবিআই চলতি বছরের ২৩ জুলাই শাকিল আহম্মেদসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম আদালতে দেওয়া পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। গত ৪ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে সেই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত আজ শুনানি ও আদেশের দিন তারিখ ধার্য করেন।

সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাক্সে বলেন, তিন বছর আগে এই দিনে পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের ঘরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে ও নির্যাতনে শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নিহত হন। অনেকেই গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ দিয়ে গত ২৩ জুলাই আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সাঁওতালদের দায়ের করা মামলার মূল আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার সঙ্গে তিনজন পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন। পুলিশ প্রশাসন ওই তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পিবিআই মামলাটি তদন্তকালে দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময়েও চিহ্নিত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনেনি। অন্যদিকে বাবা-দাদার সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাজে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তাই আদালতে নারাজির আবেদন করা হয়েছিল।