ছয় জেলায় নদী-খালের তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে আজ সোমবার নদ-নদী, খাল ও জলাশয়ের পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। ছবি: প্রথম আলো
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে আজ সোমবার নদ-নদী, খাল ও জলাশয়ের পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশে একযোগে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, দিনাজপুর, গাজীপুর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। আজ সোমবার এসব অভিযানে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, দুপুরে সদর উপজেলার জকসিন বাজার সংলগ্ন খালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় জেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুনুর রশিদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে খাল দখল করে সড়কের পাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, এর আগেও একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই আবার দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে প্রভাবশালীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দখলদাররা স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি। অভিযান চালিয়ে ৫০টি অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের খোয়াই নদের সদর উপজেলার মশাজান এলাকায় আজ অর্ধশত অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাশাপাশি জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় একই রকম অভিযান চালিয়ে আরও ৩৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ জেলার নদ-নদী খাল, জলাশয় ও সরকারি জলধারা তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় আজ থেকে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। সকাল ১০টায় শুরু অভিযানে খোয়াই নদের মশাজান সেতু এলাকার কাছে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ওই এলাকায় কয়েক বছরে নদের দুইপাড়ে অসংখ্য পাকা-আধা পাকা স্থাপনা গড়ে ওঠে। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘শুধু খোয়াই নদই নয়; জেলার সবগুলো নদ-নদী, জলাশয় ও জলধারা দখলমুক্ত করা হবে।’

এদিকে আজ চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনও উপজেলা সদরে মরা খোয়াই নদ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা। এ সময় নদের পাড়ে গড়ে ওঠা পাকা-আধা পাকা ৩৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ মরা খোয়াই নদের ৩৪টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকা অনুযায়ী গতকাল প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে আজ সদর উপজেলার ঘুইংগারহাট খালের দুই পাশে অভিযানে অবৈধ ৩০টি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। পাউবো সূত্র জানায়, ঘুইংগারহাট খালটি তেতুলিয়া নদী থেকে উঠে এসে দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়নগর বিলে শেষ হয়েছে। এ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে ঘুইংগার বাজার এলাকার প্রায় ২৫০ মিটার জায়গা ৩০ জন দখলদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। দখলের কারণে খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকেরা। অথচ ১৫ বছর আগেও ঘুইংগারহাট খালে নৌকা ও ট্রলার চলাচল করত।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে এক বছর আগে ঘুইংগারহাট খালের দখলদার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা শোনেনি। তিন মাস আগেও দ্বিতীয়বারের মতো তাদের সতর্ক করা হয়। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগেও নোটিশ দেওয়া হলেও অনেকেই স্থাপনা সরাননি। অবশেষে তারা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। পর্যায়ক্রমে ভোলার সব খাল-নদীসহ জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিদওয়ানুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে খালের দুপাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ দখল করেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দিনাজপুর শহরে প্রবাহিত ঘাগড়া খালের ওপরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। শহরের বড়পুল এলাকা থেকে এর উদ্বোধন করেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঘাগড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেন।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০-এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নদী ও খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম শুরু হয়। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরে ১৪টি খাল খননের কাজ শুরু করেছে। ঘাগড়া খালের ওপরে বালুবাড়ি, প্রাণনাথপুর, খামার ঝাড়বাড়ি, খামার কাচাই, দিনাজপুরসহ মোট পাঁচটি মৌজায় ৫৫৭টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা করা হয়েছে। ঘাগড়া খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খননের জন্য দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ সকালে শুরু অভিযানে অবৈধ শতাধিক দোকানপাট ও একটি প্যাকেজিং কারখানার অংশ বিশেষ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যৌথভাবে ওই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেতৃত্ব দেন টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান। পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আজকের অভিযানে টঙ্গী বাজার (নদী বন্দর) এলাকায় তুরাগ পাড়ের শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়।

টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় তুরাগ নদের তীরে অবৈধভাবে দ্য মার্চেন্টস লিমিটেড নামে একটি প্যাকেজিং কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থাপনা নির্মাণ করে। গত এপ্রিল মাসে ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আবারও তুরাগ নদের সীমানায় শেড নির্মাণ ও কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে দখল করে রাখে। এগুলো আজ উচ্ছেদ করে কারখানা কর্তৃপক্ষকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

পটুয়াখালী শহরের হেতালিয়া বাঁধঘাট এলাকায় বহালগাছিয়া খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এই অভিযানে ২৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।