বাস্তবসম্মত পৌরকর আইন তৈরির আহ্বান চট্টগ্রাম মেয়রের

চট্টগ্রামের পুরোনো নগর ভবনের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বক্তব্য দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের পুরোনো নগর ভবনের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বক্তব্য দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ছবি: প্রথম আলো

অপরাজনীতির কারণে আইন অনুযায়ী পৌরকর আদায় করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। একবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি। এ জন্য এই আইন বাতিল করে ‘বাস্তবসম্মত’ আইন তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র।

আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের পুরোনো নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও আইপিই গ্লোবাল যৌথভাবে দরিদ্র-বান্ধব নগর উন্নয়ন অংশীজন কর্মশালার আয়োজন করে। সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

কর্মশালায় চট্টগ্রাম সিটির মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরবাসীর সেবার মান উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়নে বা স্বপ্ন দেখতে বাধা নেই। বাস্তবায়ন করার জন্য দক্ষ জনবল ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী নগরবাসীর কাছ থেকে পৌরকর আদায় করা গেলে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে বাধা আসে উল্লেখ করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এটি নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি আছে। দলের ভেতর-বাইরেও রাজনীতি আছে। বিভিন্ন বাধার কারণে দেশের কোনো সিটি করপোরেশন এই আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে হয় আইনটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে না হয় দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী আইন তৈরি করতে হবে। এটি করা হলে মেয়রদের আর অজনপ্রিয় হওয়ার ভয় থাকবে না। দুর্নামও হবে না।

সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৬ সালের ২১ মার্চ কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছিল। প্রচলিত পদ্ধতি (স্থাপনার বর্গফুটের ভিত্তিতে) বাদ দিয়ে ভাড়ার ভিত্তিতে কর পুনর্মূল্যায়ন করে। এতে গৃহকর ‘অসহনীয়ভাবে’ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সময় তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের সব (১১টি) সিটি করপোরেশনের কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

আইনে প্রতি পাঁচ বছর পরপর কর পুনর্মূল্যায়নের কথা বলা আছে উল্লেখ করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এটি বইয়ে আছে। বাস্তবে নেই। আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু মিডিয়া আমার পাশে ছিল না। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। ’

মানুষ পান-সিগারেটের পেছনে টাকা খরচ করলেও পৌরকর দেওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ রয়েছে বলে কর্মশালায় মন্তব্য করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। পৌরকর দিলে নগরবাসীই উপকৃত হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

কর্মশালায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির নগর ব্যবস্থাপক সরওয়ার হোসেন খান বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ে অনেক মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। দ্রুতি তাঁদের সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন হলেও দৃশ্যত তেমন কোনো প্রস্তুতি দেখা যায় না।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অভিযোগ করেছেন, নগরে জনসংখ্যার চাপ ক্রমেই বেড়ে চলছে। এই অবস্থায় বিগত মেয়ররা বসে থাকেননি। তাঁরা যখন যেভাবে প্রয়োজন মনে করছেন তখনই অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। যা পরবর্তী সময়ে সমস্যা তৈরি করেছে।

নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়তন দ্বিগুণ করার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নগরে জনসংখ্যার চাপ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে মনে করছেন মেয়র।

কর্মশালার সঞ্চালক পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোর আর্থিক সীমাবদ্ধতা কীভাবে নিরসন করা যায় তা ভাবতে হবে। ঢাকায় সিটি করপোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন চট্টগ্রামের চতুর্দিকে সীমানা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

আর নগরের পাশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তথা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তাঁদের জন্য নাগরিক সুবিধা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

কর্মশালায় সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।