ঢাকায় বছরে বায়ুদূষণ বেড়েছে ২০ শতাংশ

যেতে হয় নাকে হাত চেপে । ছবি :  দীপু মালাকার
যেতে হয় নাকে হাত চেপে । ছবি : দীপু মালাকার

এক বছরে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (কেপস)। 

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নগরের প্রবীণ ও শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব রোধে করণীয়’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে সংলাপের আয়োজন করে। 

গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা শহরের মানুষ মাত্র ৯ দিন ভালো বায়ু সেবন করেছে। মধ্যম থেকে সতর্কতামূলক দূষিত বায়ু সেবন করেছে ১৮৮ দিন। এ ছাড়া ১০৭ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৮২ দিন খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ৫ দিন মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর বায়ু সেবনের তথ্য উঠে আসে গবেষণায়।

সংলাপে বলা হয়, এই দূষণের কারণে ঢাকার বাসিন্দারা ফুসফুসের ক্যানসার, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, যকৃতের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, চর্মরোগ ও নিউমোনিয়ার মতো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া সংলাপে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে গত ছয় বছরে ঢাকার বায়ুমান পর্যালোচনার তথ্য উল্লেখ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ঢাকায় আদর্শ বায়ুমানের চেয়ে বায়ুদূষণ সব সময় চার থেকে ছয় গুণ বেশি ছিল। এই উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। 

সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেনিন চৌধুরী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বারসিকের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

সংলাপে বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা, আচ্ছাদন দিয়ে ধুলা সৃষ্টিকারী পণ্য (মাটি, বালু, ইট) পরিবহনে ব্যবস্থা করা, রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া, নগরের জলাশয়গুলো সংরক্ষণ ও পরিষ্কার রাখা, ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কমাতেগণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি সঠিক উপায়ে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি অবকাঠামো তৈরি, সম্প্রসারণ ও মেরামতের সময় খনন করা মাটি দ্রুত সরিয়ে না ফেলা হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।