মিষ্টি রোদে কিছুটা স্বস্তি

সাত দিন পর কুড়িগ্রামে সূর্যের মুখ দেখা যায় গতকাল। তবু কখনো মেঘ, কখনো রোদ। এর মধ্যেই ধান শুকাতে দেন কিষানিরা। দুপুরে উলিপুর উপজেলার রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
সাত দিন পর কুড়িগ্রামে সূর্যের মুখ দেখা যায় গতকাল। তবু কখনো মেঘ, কখনো রোদ। এর মধ্যেই ধান শুকাতে দেন কিষানিরা। দুপুরে উলিপুর উপজেলার রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও গেল সপ্তাহজুড়ে রোদের দেখা মেলেনি। কোথাও চার থেকে পাঁচ দিন ধরে দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। ছিল কনকনে হিমেল বাতাস, কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘ। অবশেষে গতকাল সোমবার দেখা মিলেছে রোদের। কুয়াশার আস্তর ভেদ করে হেসেছে সূর্য, যদিও তা ছিল পরিমিত।

কয়েক দিন পর রোদের দেখা পাওয়া গেলেও যথেষ্ট তাপ ছড়াতে পারেনি সূর্য। উষ্ণতা সামান্য বাড়লেও ঠান্ডার প্রকোপ রয়েই গেছে। হিমেল বাতাস আর কুয়াশার দাপটও ছিল অনেকটা আগের মতো। এরপরও মিষ্টি অল্প রোদে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে মানুষ। জটলাবদ্ধ হয়ে রোদে দাঁড়িয়ে উষ্ণতা গায়ে মেখে নিতে দেখা গেছে অনেককে। কাজে নেমেছেন খেটে খাওয়া মানুষেরাও।

রংপুরে গতকাল সকাল আটটার দিকে সূর্য দেখা যায়। এ সময় বাসাবাড়ির ছাদ ও আঙিনায় কাপড় শুকাতে দেন অনেকে। শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ উঠান ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোদ পোহান। এ সময় আবহাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।

নগরের কাচারি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষ রোদে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ বাজারে ফটোস্ট্যাটের ব্যবসা করেন মোহাম্মদ হিরা। তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় মেশিনও ঠিকমতো চলে না। বিকল হয়ে পড়ে। টানা চার দিন এই অঞ্চলের মানুষজন ঠান্ডায় কাহিল ছিলেন। আজকে রোদের তাপ নিতে কী যে আনন্দ লাগছে! অনেক দিন পর শরীর উষ্ণতা পেল।’

টাউন হলের সামনের চায়ের দোকানের রোকন মিয়া বলেন, ‘ঠান্ডা পানি হাতোত না লাগানোর জন্যে চার দিন থাকি কাজ করি নাই। আইজ কামোত আসছি।’ রংপুর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন জানান, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তাঁরা সূর্যের মুখ দেখেছিলেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে এখানে সূর্য উঁকি মারে। বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে রোদের ঝিলিক দেখা দিলেও ঠান্ডার দাপট ছিল আগের মতোই।

যমুনেশ্বরী নদীর ধারে বদরগঞ্জের জলুবর গ্রামের অলোকা রানী (৬৭) বলেন, ‘বাবু অ্যাংকা ঠান্ডা আর সহ্য হওচে না। একটা কম্বলও নাই যে গাওত দিয়া ওসুম পাইম। রাইতোত হুড়হুড় করি বাতাস ঘরোত ঢোকে।’

বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে তারাগঞ্জে ২ হাজার ৯৫০ ও বদরগঞ্জে ৫ হাজার ৯০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

সাত দিন পর গতকাল কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা পেয়েছেন কুড়িগ্রামের মানুষ। তবে রোদের তেমন উত্তাপ ছিল না। কিছুক্ষণ পরপর রোদ মিলিয়ে যায়। এর মধ্যেই গ্রামের মানুষ সড়কে ও জমিতে ধান শুকাতে লেগে পড়েন। চলে কাপড় পরিষ্কার ও শুকানোর পালা।

উলিপুর উপজেলার রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামের পল্লবী রানী রায় বলেন, ‘এক সপ্তাহ থাকি রোদ নাই। ঘরোত চাউল শ্যাষ। তাই ধান শুকপার নাগিছি।’

কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কার্যালয় জানায়, গতকাল এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীতে পাঁচ দিন পর গতকাল সকাল ১০টার দিকে সূর্য উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। দুপুর ১২টার দিকে ঝলমলে রোদের দেখা মেলে। বিকেল চারটার মধ্যে কুয়াশার চাদরে আবারও ঢাকা পড়ে সূর্য।

দুপুরে জেলা শহরের মরাল সংঘ মোড়ে সহিদুলের চায়ের দোকানের সামনে কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেখানে স্কুলশিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, আজকে তাপমাত্রা তেমন না বাড়লেও মিষ্টি রোদে স্বস্তি পেয়েছেন মানুষজন। সদর উপজেলার দোগাছি গ্রামের রিকশাচালক মো. সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘রোদ দেখে একটু স্বস্তি পাচ্ছি।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত বলেন, নীলফামারীর ছয় উপজেলায় দুই দফায় সরকারিভাবে ৩৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর এবং প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ, রংপুর]