'ফেসবুক কমিটি' নিয়ে এলাকায় তোলপাড়

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। দলটির প্রবীণ নেতা সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান ১৮ ডিসেম্বর তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ১২৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি পোস্ট করার পর চলছে আলোচনার ঝড়। ফেসবুকে কেউ স্বাগত জানিয়ে এই কমিটির মাধ্যমে বিএনপির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন। আবার কেউ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, চার বছর আগে কটিয়াদী বিএনপির কমিটি গঠন হয়। কমিটির সভাপতি হন তোফাজ্জল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল রহমান। এক বছর আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু নতুন করে কমিটি গঠন না হওয়ায় তোফাজ্জল-আরিফুল কমিটি উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দূরত্ব বাড়ে। তিনি উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর তিনি একটি প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন এবং ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে তা পোস্ট করে আলোচনার জন্ম দেন। তাঁর কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানকে এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল রহমানকে করা হয় ৩ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। সদস্যসচিব করা হয় রফিকুল আলমকে। মেজর আখতারের প্রস্তাবিত এই কমিটির মেয়াদ ধরা হয়েছে তিন মাস। কমিটির কর্মপরিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দেওয়া।

মেজর আখতার জেলা কমিটির কাছে তাঁর প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন চেয়েছেন। তবে জেলা কমিটি থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, ‘ফেসবুকের কল্যাণে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের প্রস্তাবিত কমিটির নামের তালিকা দেখেছি, কিন্তু সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় হাতে এসে পৌঁছায়নি। প্রস্তাব যে কেউ দিতে পারেন, কিন্তু প্রস্তাবটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি।’

ফেসবুকে কমিটিতে নিজেদের নাম দেখে অনেকে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন। কেউ কেউ এই কমিটিতে থাকতে চান না বলে মত দিয়েছেন। বিশেষ করে আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই কমিটিকে গ্রহণ করেননি বলে উল্লেখ করে পৃথক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও মেজর আখতারের প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন খান ১৯ ডিসেম্বর লিখিতভাবে জানান, মেজর আখতার তাঁর ফেসবুকে যে কমিটির নাম প্রচার করেছেন, এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি অবগত নন। তিনি বলেন, ‘আমি সভাপতি। অথচ কেউ কমিটি গঠন করে ফেলল, আমি জানি না। আবার আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আমারই সম্মতি না নিয়ে। এ যেন মনগড়া খেলা।’

সাধারণ সম্পাদক আরিফুল বলেন, ‘মেজর আখতার বিতর্ক জন্ম দিতে পছন্দ করেন। এখতিয়ার না থাকলেও নিজেই কমিটি করে ফেসবুকে জানান দিয়ে নতুন করে বিতর্কে এসেছেন। তাঁর এসবে আমরা নেই।’

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন। মেজর আখতার একবার এই আসনের বিএনপি–দলীয় সাংসদ ছিলেন। তাঁর বাড়ি কটিয়াদী। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়কও ছিলেন। মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল তাঁকে বহিষ্কার করে। আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দল তাঁকেই যোগ্য ভেবে মনোনয়ন দেয়, কিন্তু তিনি বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

আগের কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়ার জবাব তিনি তাঁর ফেসবুক আইডির মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছেন। না জানিয়ে কমিটি করার বিষয়ে তোফাজ্জল হোসেন খানের প্রতিক্রিয়ার জবাবে আখতারুজ্জামান ২০ ডিসেম্বর ফেসবুকে লেখেন, ‘তোফাজ্জল সাহেবের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ সত্যের অপলাপ। এই কমিটিতে তাঁর সম্মতি রয়েছে। শুধু তাঁর সঙ্গে নয়, আমি অন্য নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেই কমিটি করেছি।’