জাহাঙ্গীরের ডায়েরিতে উঠে এল রাজশাহীর শীত

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বরের দুপুর। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কমবেশি কুয়াশা। মৃদুমন্দ বাতাস ছিল। সূর্যের দেখা মেলেনি সারা দিন। গত শনিবার ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী শহরে দুপুরের পরিবেশও ছিল এমন।

২০১৩ থেকে ২০১৯—এই সাত বছরে ২১ ডিসেম্বরে প্রকৃতি থেকেছে প্রায় একই রকম।  সীমানার ওপারে কলকাতার ফসিলস ব্যান্ডের গাওয়া একটি গানের লাইনের সঙ্গে এমন দুপুরের মিল পাওয়া যায়—‘সেদিনও ছিল দুপুর এমন’।

রাজশাহীতে বসে সাত বছর ধরে জাহাঙ্গীর শাহ নামের এক ব্যক্তি শহরের পরিবেশ নিয়ে তাঁর ডায়েরি লিখেছেন। ডায়েরির ওই লেখা থেকে সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছর ২১ ডিসেম্বরের দুপুরের বর্ণনায় মেঘ আর কুয়াশার চিত্র পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীর শাহ ৪০ বছর ধরে রাজশাহীতে বসবাস করেন। শহরেই আছে নিজের নামে কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর। ২০১৩ সাল থেকে বছরের প্রতিটি দিনের পরিবেশনের বর্ণনা লিখে রাখেন ডায়েরির পাতায়।

জাহাঙ্গীর শাহের ওই ডায়েরির সূত্র ধরে গত সাত বছরে প্রকৃতিতে শীতের আনাগোনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ে রাজশাহীতে শীতের আসা-যাওয়ার সময়, দিনের বেলার প্রকৃতির আবহ প্রায় কাছাকাছি রকমের। এই সাত বছরে ১৪ থেকে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে শীতের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত রাজশাহীতে রাতের বেলায় কাঁথা বা কম্বলেই শীত নিবারণ করা গেছে।

জাহাঙ্গীর শাহের ডায়েরির বর্ণনা অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ২১ ডিসেম্বর সকালে হাড়কাঁপানো শীতের সঙ্গে বাতাস ছিল। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। পরের বছর ২০১৪ সালের দুপুর পর্যন্ত রোদ থাকলেও দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ব্যতিক্রম ছিল ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর। সেদিন সারা দিনই রোদ ছিল। ২০১৬ সালে দুপুর পর্যন্ত রোদ ছিল। দুপুরের পরে হঠাৎ করেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। ২০১৭ সালে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ছিল। দুপুরের পর রোদ উঠেছিল। ২০১৮ সালে আবার রৌদ্রোজ্জ্বল সারা দিন পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের মতো এ দিন কোনো কুয়াশা ছিল না।

তবে সাত বছরের ‘২০ ডিসেম্বর’ রাজশাহীর আবহাওয়া প্রায় একই রকম দেখা গেছে। ২০১৩ সালের এই দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। মেঘলা আকাশ ছিল। এরপর থেকে টানা পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত দিনটি প্রায় একই রকম কুয়াশা ঢাকা ও মেঘাচ্ছন্ন ছিল। চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর সকালে হালকা কুয়াশা ছিল। সারা দিন রোদ থাকলেও রোদের তেজ ছিল না। ঠান্ডায় জবুথবু হয়েছেন মানুষ। বলতে গেলে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। প্রকৃতির এই রূপ মনে নান্দনিকতার আবহ জাগালেও ক্ষতি হয়েছে মাঠের ফসলের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেলে বছরের এই সময়ে এমন আবহাওয়ার কারণে ধানখেতের বীজতলার চরম ক্ষতি হয়। সরিষাখেতে পোকার আক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

সাত বছরের এই দিনগুলোতে মানুষের মনের অবস্থা কেমন ছিল তা হয়তো নিজ নিজ স্মৃতি হাতড়ালেই পাওয়া যাবে। তবে তাতে আছে নস্টালজিক (স্মৃতিকাতর) হওয়ার আশঙ্কা।