ভরসা এখনো মা

শত উৎকণ্ঠায় সন্তানের ভরসা শেষ পর্যন্ত মা। মডেল দিনা আলম ও আয়মান নাসিম।  ছবি: সুমন ইউসুফ
শত উৎকণ্ঠায় সন্তানের ভরসা শেষ পর্যন্ত মা। মডেল দিনা আলম ও আয়মান নাসিম। ছবি: সুমন ইউসুফ

বাংলাদেশের তরুণদের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা মা। মায়ের তুলনায় বন্ধুবান্ধব, জীবনসঙ্গী ও বাবা পিছিয়ে আছেন ঢের। ভাইবোন ও অন্যান্য পরিজনের ওপরও তরুণদের আস্থা কম। ওদিকে কারও ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না—এমন তরুণের সংখ্যাও বাড়ছে। 

জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা তাঁরা কার সঙ্গে বেশি আলোচনা করেন। জরিপে অংশ নিয়ে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বলেছেন, সংকটের সময় তাঁরা মায়ের সঙ্গেই আলোচনা করেন বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই প্রবণতা বেশি। নারী-পুরুষভেদে মায়ের ওপর নির্ভরশীলতা প্রায় কাছাকাছি। বয়সের সীমা বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণেরা মায়ের সঙ্গে বেশি সংশ্লিষ্ট থাকেন, সংখ্যার হিসাবে তা প্রায় ৬১ শতাংশ। আবার ৬২ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভরসা রাখেন মায়ের ওপর। ২০১৭ সালের জরিপেও অংশ নেওয়া তরুণদের ৬০ শতাংশের বেশি বলেছিলেন মায়ের সঙ্গেই তাঁরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে আলোচনা করেন বেশি। 

মায়ের পরই তরুণেরা স্থান দিয়েছেন বন্ধুদের। তবে বন্ধুদের ওপর ভরসা করা তরুণদের সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশ কমেছে। প্রায় ১০ শতাংশ কমে এখন ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ আস্থা রাখছেন বন্ধুবান্ধবদের ওপর। বন্ধুদের ওপর পুরুষদের নির্ভরশীলতা নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। মাত্র সাড়ে ১৯ শতাংশ নারী জীবনের বিভিন্ন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বন্ধুদের জানান। উল্টো দিকে ৫৮ শতাংশের বেশি পুরুষ বন্ধুদের কাছে জীবনের ভালো-মন্দ মন খুলে বলেন। এই হার বিবেচনায় নিয়ে বলতে হয়, মায়ের চেয়ে বন্ধুদের কাছে জীবনের ভালো-মন্দ পুরুষেরা বেশি মুক্তকণ্ঠ। 

বন্ধুদের পর স্থান পেয়েছেন জীবনসঙ্গীরা। তবে পুরুষেরা তাঁদের স্ত্রীকে সমস্যার কথা খুব বেশি জানান না। মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ পুরুষ অর্ধাঙ্গিনীর কাছে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেন। অবশ্য নারীরা পুরুষদের ওপর আস্থা রাখেন বেশি। জীবনসঙ্গীর কাছে জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেন ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ নারী। জরিপে দেখা গেছে, নারীরা সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখেন মায়ের ওপর। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে সেই জায়গাটি বন্ধুদের জন্য বরাদ্দ। 

তরুণদের ভরসাস্থল হিসেবে বাবা পিছিয়ে পড়েছেন অনেকখানি। ২০১৭ সালের জরিপে জীবনসঙ্গীদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিলেন বাবা। এবার এক ধাপ পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন বাবা। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ২৫ শতাংশ কিছু বেশি বলেছেন, জীবনের নানা সংকটে তাঁরা বাবার দ্বারস্থ হন। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের তরুণদের বাবার প্রতি নির্ভরশীলতা বেশি, এ ক্ষেত্রে ব্যবধান প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। ওদিকে নারীদের তুলনায় পুরুষদের বাবার প্রতি আস্থা বেশি, পার্থক্য প্রায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। 

জরিপ অনুযায়ী, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবার প্রতি তরুণদের নির্ভরশীলতা কমতে থাকে। জরিপে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণদের ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ বাবার ওপর ভরসা রাখেন। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের ক্ষেত্রে তা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের ক্ষেত্রে মোটে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বাবার সঙ্গে সব কথা ভাগাভাগি করেন। 

জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী তরুণদের মধ্যে মা, বন্ধু ও বাবা মূল ভরসার জায়গা। আর শিক্ষার্থী নন এমন তরুণেরা মায়ের ওপর বেশি ভরসা রাখেন। এরপরই জীবনসঙ্গী ও বন্ধুদের গুরুত্ব দেন। 

তরুণদের ভরসাস্থল হিসেবে ভাইবোনদের অবস্থান খুব একটা জোরালো নয়। মাত্র ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বোনদের ওপর নির্ভরশীল। ভাইয়ের ওপর আস্থা আছে ১২ শতাংশের কিছু বেশি তরুণের। আগেরবারের জরিপের তুলনায় বোনদের ওপর ভরসার মাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত আছে। তবে ভাইদের ওপর ভরসা কমেছে ৬ শতাংশের বেশি তরুণের।