বাড়াতে হবে গুণগত পারিবারিক সময়

হেলাল উদ্দিন আহমেদ
হেলাল উদ্দিন আহমেদ

আধুনিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে নারীদের অংশগ্রহণে স্বভাবতই পরিবার থেকে বাবা ও মা উভয়ের সময়ই কমে গেছে। এর কারণে পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সংযোগ কমে যাচ্ছে, এমনটাই দেখা যাচ্ছে। তবে সংযোগ কমে যাওয়ার কারণ বাবা–মা উভয়ের চাকরি নয়, বরং গুণগত পারিবারিক সময় কমে যাওয়া।

জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে এখনো মানবিক অনুভূতির শেষ আশ্রয় মা। জরিপে এটাও দেখা গেছে, বাবার সঙ্গে ছেলেমেয়েদের সংযোগ কমছে। শহরে যেখানে বাবা–মায়ের ভূমিকা আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, সেখানেই সংযোগ কমে যাওয়ার হার বেশি।

সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে মায়ের সঙ্গে বাবাকেও এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানের যত্ন নেওয়া, তাদের লেখাপড়ায় সাহায্য করার মতো কাজগুলোয় বাবারা অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে বাবার প্রতি সন্তানের আস্থা বাড়বে।

বর্তমানে অভিভাবকত্বে একধরনের বিক্ষেপণ লক্ষ করা যায়, বাবা–মা নিজেদের বিশ্রাম বা অন্য কোনো কাজের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সন্তানের হাতে স্মার্ট ডিভাইস ধরিয়ে দেন। সন্তান যখন বাবা–মায়ের কাছে আসার চেষ্টা করছিল, সে সময় তাকে অন্যদিকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সন্তান স্বভাবতই বাবা–মায়ের ওপর আস্থা করা কমিয়ে দেবে। যখন সন্তান বাবা–মায়ের কাছে আসতে চাইবে তখন হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে কিছুটা সময় দিতে হবে, যেন সে বুঝতে পারে পরিবারে তার কথা শোনার মানুষ আছে।

পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি উপায় হতে পারে সন্তানকে পরিবারের কাজের অংশ করা। তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট ছোট কাজ দেওয়া যেতে পারে, এতে তাদের নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং তারা পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শেখে। ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে পারিবারিক সংযোগ বাড়ে, যা পরে বড় সমস্যা সহজে সমাধান করে।

পরিবারের মধ্যে কোনো আড়াল রাখা চলবে না। ভাবা যাবে না বাচ্চারা ছোট, তারা বুঝবে না। যেকোনো পরিস্থিতিকে তাদের উপযোগী করে বুঝিয়ে দিতে হবে, তাদের মতামত নিতে হবে। এভাবে পরিবারের কাছেও সন্তানেরা তাদের সমস্যা বলার পথ খুঁজে পাবে।

পরিবারের সঙ্গে দূরত্বের সবটুকু দায় শুধু বাবা–মায়ের নয়, এখানে সন্তানেরও একই রকম দায় আছে। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে গেলেও ফিরে বাবা–মায়ের দায় নিতে হবে এই ধারণা থেকে বের হওয়া যাবে না। চেষ্টা করতে হবে সব কাজের শেষে বাবা–মায়ের খোঁজ নেওয়ার এবং যদি কোনো দূরত্ব তৈরি হয়, তা মিটিয়ে ফেলার।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট