গণপিটুনিতে তাসলিমা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ২২ জানুয়ারি

তাসলিমা বেগম
তাসলিমা বেগম

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় স্কুল প্রাঙ্গণে ছেলেধরা গুজবে তাসলিমা বেগম ওরফে রেনু (৪০) হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত নুন তারিখ ধার্য করেন।

বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক লিয়াকত আলী বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২০ জুলাই সকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাসলিমা তাঁর চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে যান। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাঁকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করেন। এই গুজব দ্রুত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ নারী-পুরুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তাদের কবল থেকে রক্ষা করতে তাসলিমাকে স্কুলের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। কিন্তু কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ কলাপসিবল গেট ভেঙে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে তাসলিমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। এভাবে আধ ঘণ্টা অমানবিক নির্যাতনের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাসলিমা।

তাসলিমার ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছিলেন। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। হত্যার এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ৫০ জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। পুলিশ বলেছে, গত জুলাইয়ের ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তাসলিমা বেগমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। রাজধানীর মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

তাসলিমার স্বজনেরা জানান, মায়ের জন্য তাসনিম মাহিরা ওরফে তুবার কান্না থামছে না। মাকে ছাড়া সে খেতে চায় না। সে তার বড় খালার বাসায় আছে। ছোট্ট তাসনিম ঘুমাতে গিয়ে প্রতি রাতে তার মায়ের জন্য বিলাপ করে বলে, ‘আমি মাকে ছাড়া ঘুমাব না, তোমরা আমার মাকে এনে দাও।’ মায়ের কথা জানতে চাইলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়, মা তার মামার সঙ্গে বিদেশে আছে। সেখান থেকে শিগগির ফিরে আসবে।

দুই বছর আগে তাসলিমার সঙ্গে তাঁর স্বামী তসলিম হোসেনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তাঁদের এক সন্তান তাসনিম তার মায়ের সঙ্গে মহাখালীর ওয়ারলেস গেটসংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকত। আরেক ছেলে তাহসিন আল মাহিদ (১১) তার বাবার সঙ্গে বাড্ডায় থাকত। সম্প্রতি বাবা (তসলিম) আরেকটি বিয়ে করায় স্বজনেরা মাহিদকে তার বড় খালার বাসায় নিয়ে আসে। এখন দুই ভাইবোনের আশ্রয় হয়েছে বড় খালার বাসায়। এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক অস্থিরতার কারণে মাহিদ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

তাসলিমা ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছিলেন। পরে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। বিয়ের পর তিনি আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেন। বড় ছেলের বয়স যখন দেড় বছর, তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তাসলিমা দেড়-দুই বছর আগে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা করানোর পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।