ছেলেকে বেঁধে স্ত্রীর শরীরে ছ্যাঁকা দেন স্বামী

নির্যাতন
নির্যাতন

এক ছেলের মা ২৭ বছর বয়সী নিলুফার এখন আঘাতে-নির্যাতনে ছটফট করছেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। তাঁর মুখ, চোখ, হাতসহ শরীরের বেশির ভাগ অংশেই খুন্তির ছ্যাঁকা। মাথার চুল কাটা। তাঁর ওপর এমন নির্যাতন করেছেন তাঁর স্বামী মোশারফ হোসেন ওরফে উজ্জ্বল (৩৫)। যৌতুক না পেয়ে তিনি এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ। নোয়াখালী শহরের বছিরার দোকান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

নিলুফার ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে নিলুফার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন মোশারফ। ভয়ে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। অবস্থার অবনতি হলে ওই গৃহবধূকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীর মুখ, হাত, পাসহ পুরো শরীরে অসংখ্য ছ্যাঁকার পোড়া দাগ রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার নোয়াখালীর সুধারাম থানা মামলা করেছেন নিলুফারের বাবা ইউছুফ আলী। জামাতা মোশারফ হোসেনের বিচার দাবি করে ইউছুফ আলী বলেন, ‘পশু ছাড়া কোনো মানুষ এমন অমানুষিক নির্যাতন করতে পারে না। হাসপাতালের লোকজনও নিলুফারের শারীরিক অবস্থা দেখে আঁতকে উঠেছেন।’

নিলুফার ইয়াসমিনের বাবার বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বড় রামদেবপুর গ্রামে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ নিলুফার ইয়াছমিন বলেন, প্রায় নয় বছর আগে বেগমগঞ্জ উপজেলার খানপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের সংসারে আট বছরের এক ছেলে আছে। ছেলেটি বাক্‌প্রতিবন্ধী। বিয়ের কয়েক বছর পর তাঁর স্বামী বিদেশ যান। বিদেশে যাওয়ার সময় নোয়াখালী শহরের বছিরার দোকান এলাকায় তাঁকে একটি বাসা ভাড়া করে দেন। তিনি সেখানেই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। চার বছর থাকার পর মোশারফ প্রায় দেড় মাস আগে দেশে ফেরেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু করেন মোশারফ।

ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন, মোশারফ তাঁকে বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে চাপ দেন। বাধ্য হয়ে ৬ ডিসেম্বর তিনি বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা এনে দেন। ১৮ ডিসেম্বর আরও টাকা এনে দিতে বলেন মোশারফ। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রাত নয়টার দিকে মোশারফ বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে ছেলেকে বেঁধে রাখেন। এর পর গরম খুন্তি দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। মাথার চুলও কেটে দেন। ছেলের গলায় ছোরা ধরে তাঁকে চিৎকার দিতে দেওয়া হয়নি। রাত ১০টার দিকে তিনি বাসা থেকে কৌশলে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে কবিরহাটে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ২০ ডিসেম্বর বিকেলে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ খবর পেয়ে মোশারফ পরের দিন শনিবার রাতে সন্ত্রাসী নিয়ে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি ভয়ে সেখান থেকে চলে যান।

এদিকে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ দেখতে আজ সোমবার হাসপাতালে যান নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা ও নোয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. আবদুর রহীম।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. আবদুর রহীম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টিকে তাঁরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। অভিযুক্ত স্বামী ও তাঁর সহযোগীদের যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা হবে।