কাপ্তাইয়ের বাদামি কোকিল

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের একটি মরা গাছে বাদামি কোকিল।  ছবি: লেখক
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের একটি মরা গাছে বাদামি কোকিল। ছবি: লেখক

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড় ছড়ার সর্পিল পথ ধরে হাঁটছি। ছড়ার কয়েকটি বাঁক পেরিয়ে ডুমুরগাছের বাঁকে এসে ফিঙে-কোকিলের দেখা পেলাম। ওর ছবি তুলতে তুলতেই খানিকটা দূরে পাহাড়ের ওপর একটা মরা গাছে বাদামি পিঠের পাখিটিকে ডাকতে দেখলাম। বহু দিন ধরে ওকে খুঁজছি; কাজেই এক মুহূর্ত দেরি না করে শাটারে ক্লিক করলাম। একটু ভালো ছবির আশায় পাহাড়ের দিকে পা বাড়াতেই অতি চালাক পাখিটি উড়াল দিল। আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ওর দেখা না পেয়ে সামনের দিকে এগোলাম। ৩১ মার্চের ঘটনা এটি।

বিরল এই আবাসিক পাখির নাম বাদামি কোকিল। ইংরেজি নাম বেন্ডেড বে কাক্কু, গোত্র কুক্কুলিডি। বাংলাদেশ ছাড়াও পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ পাখির দেখা মেলে।

বাদামি কোকিলের দৈর্ঘ্য ২২-২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮-৩৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ লালচে আভাযুক্ত বাদামি, তার ওপর কালচে-বাদামি ডোরা। লেজ লালচে। মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও দেহতল সাদাটে, তার ওপর কালচে-বাদামি সরু ডোরা। ভ্রু-রেখা সাদা। চোখ বাদামি। পা ও আঙুল ধূসরাভ-সবুজ। নখ গাঢ়-বাদামি। কালচে ঠোঁটের গোড়া জলপাই-ধূসর। স্ত্রী-পুরুষে পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ের পেছনে খানিকটা হলদেটে ডোরা থাকে। দেহতল বেশ প্রশস্ত, তাতে ছড়ানো-ছিটানো কিছু ঢেউখেলানো ডোরা দেখা যায়।

এরা সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। বনের প্রান্তদেশ ও উন্মুক্ত বনভূমিতে একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। বড় পাতাওয়ালা গাছের পাতার নিচে ও উঁচু লতাগুল্মে শুঁয়াপোকা ও ছারপোকাসহ পোকামাকড় খুঁজে খায়। ‘পে...টার...পে...টার...’ শব্দে ডাকে।

প্রজননকাল ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। এ সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি ভোরবেলা ও গোধূলিতে গাছের মগডালে বসে ডাকে। অন্যান্য কোকিলের মতো স্ত্রী বুলবুলি, ছাতারে, ফটিকজল বা সাত সাইলির বাসায় লুকিয়ে ডিম পাড়ে। বংশধর নিশ্চিত করতে একাধিক পোষকের বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা পোষকের বাসাপ্রতি ১-২টি। ডিমের রং বেগুনি-বাদামি দাগসহ সাদা থেকে লালচে-বাদামি, যা পোষকের ডিমের আগেই ফোটে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।