'মাদক, ইভটিজিং আর জুয়ার শাস্তি জুতাপেটা'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের কোনো কিশোর-যুবক মাদকসেবন বা ব্যবসা, জুয়া আর ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁকে পাঁচবার জুতাপেটা করা হবে। একই সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার এক সালিস বৈঠকে এ ঘোষণা দেন সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ঠাকুর। উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চল পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে হাজী মুকসুদ আলী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই সালিস অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে হাজার খানেক লোকের উপস্থিতিতে মাদক ব্যবসা, জুয়া খেলা থেকে সরে যেতে জড়িত ব্যক্তিদের ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, পরমানন্দপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৮ ডিসেম্বর নূর আলী ও আইয়ুব খাঁর লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ দুই পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হন। এ সময় ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট এবং জমির ফসলও নষ্ট করা হয়। পরস্পরকে দোষারোপ করে দুই পক্ষই থানায় মামলা করে। এরপর আশপাশের পাঁচটি গ্রামেও বিভিন্ন বংশের লোকজনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা ঘটতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের পক্ষ থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও এলাকার বর্তমান সাংসদ বিএনপির নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার গ্রাম পরমানন্দপুরের ২২ জন সালিসকারীর (সরদার) বিরুদ্ধে গত ৯ ডিসেম্বর রাতে মামলা করা হয়।

এসব বিষয় নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পরমানন্দপুর গ্রামে হাজী মুকসুদ আলী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক সালিস বৈঠক করা হয়। এতে পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর, ফতেপুর, বরইছাড়া, ষাটবাড়িয়া, হরিপুর গ্রামের হাজার খানেক মানুষ অংশ নেয়। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনায় এলাকার কিশোর-যুবকদের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব, বিরোধ এবং দাঙ্গা-ফ্যাসাদের কারণ হিসেবে মাদক, জুয়া আর ইভটিজিংকে চিহ্নিত করা হয়। সালিস বৈঠকে বিবদমান পক্ষগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকশিমুল ইউনিয়নের কিশোর-যুবক মাদকসেবন বা ব্যবসা, জুয়া আর ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়ালে পাঁচবার জুতাপেটা করা হবে বলে ঘোষণা দেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর।

আজ বুধবার সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উভয় পক্ষের গ্রামীণ বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও মামলা চলবে। এখন থেকে যেখানেই মারামারির ঘটনা ঘটবে, সেখানেই এসব সরদারের বিরুদ্ধে মামলা হবে। কারণ দাঙ্গা-ফ্যাসাদের ঘটনার পেছনে এই সরদারদের ভূমিকাই থাকে প্রধান।’

সালিস বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘প্রতীকী অর্থে জুতাপেটার কথা বলা হয়েছে। সবাই যেন সতর্ক হয়। কেউ যেন এ ধরনের কাজে যুক্ত না হয়।’