সুযোগ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাপস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তাপসের পরিবার। ছবি: প্রথম আলো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তাপসের পরিবার। ছবি: প্রথম আলো

দরিদ্র পরিবারের ছেলে হলেও স্বপ্নটা কখনো ছোট হতে দেননি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার তাপস সরকার। ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাপস ও তাঁর পরিবার।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রহিমাপুর খিয়ারপাড়া গ্রামে তাপসের বাড়ি। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তাপস বড়। বাবা পুতুল চন্দ্র সরকার আগে রংপুর শহরে ভাড়ায় রিকশা চালাতেন। তিন বছর আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পান। এরপর থেকে কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। মা মালতী রানী অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান।

তাপসদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পরিবারের সহায়সম্বল বলতে দুই শতক জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা পুরোনো দুটি টিনের ঘর। একটি ঘরের এক পাশে বর্গা নেওয়া গরু-ছাগল থাকে, অন্য পাশে থাকেন তাপস। ঘরের আসবাবপত্র বলতে দুটি চৌকি আর একটি পড়ার টেবিল। মা মালতী রানী ধান মাড়াইয়ের কাজে গেছেন। তাপস অন্যের তামাকখেতে কাজ করছেন। তামাকখেতে দাঁড়িয়েই কথা হয় তাপসের সঙ্গে। তিনি জানান, উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০১৮ সালে তারাগঞ্জ ও/এ ডিগ্রি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পান জিপিএ-৪.৮৩। এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধাতালিকায় ২৯তম স্থান পেয়েছেন। ভর্তি হতে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে বলে শুনেছেন। কিন্তু এত টাকা তাঁর হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব। তাই পড়ার খরচ ও ভর্তির টাকা কীভাবে জোগাড় করবেন, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।


তাপসের বাবা বলেন, ‘দুই শতক বসতভিটে ছাড়া আমার আর কিছু নেই। স্ত্রী কাজে গেলে ভাত জোটে, না হলে উপোস করে দিন কাটে। ছেলেটা খেয়ে না–খেয়ে লেখাপড়া করেছে। ঢাকার বড় কলেজে (বিশ্ববিদ্যালয়ে) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ওকে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।’

তাপসের মা বলেন, ‘পেটে ভাত জোগাড় করতে পারি না। উপোস করে দিন কাটিয়েছি। ছেলেটাকে এখন কীভাবে পড়াব, ভর্তি করানোর টাকা কোথায় পাব?’

কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তুহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাপসের পরিবার খুবই হতদরিদ্র। পড়ার খরচ জোগাতে দিনমজুরি করেছেন তিনি। প্রতি ধর্মীয় উৎসবে সরকার হতদরিদ্র পরিবার প্রতি ভিজিএফের যে ১৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়, তা তাপসের পরিবারকে দেওয়া হয়।

তাপসের মুঠোফোন ও বিকাশ নম্বর ০১৩১৫৭২৮১৩৩।