আলো ছড়ানো ফুলের মেলা

ফুলের ছবি তোলায় ব্যস্ত দুই দর্শনার্থী। গতকাল রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।  প্রথম আলো
ফুলের ছবি তোলায় ব্যস্ত দুই দর্শনার্থী। গতকাল রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। প্রথম আলো

শীতের সন্ধ্যা ততক্ষণে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পাতলা কুয়াশার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, মসলিনের মতো কুয়াশার নেকাবের ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে টবে ফোটানো হলুদ গাঁদার দল, ভেজা চন্দ্রমল্লিকা। সঙ্গে ঋজু গ্রীবায় মাথা দোলানো মনোহর ডালিয়া, বাহারি গোলাপ আর হরেক রকম রংবেরঙের অর্কিড গোটা মাঠে যেন আলো ছড়িয়ে রেখেছে।

শীত মানেই পিঠা–পায়েস। আবার শীত মানেই শতেক রকম ফুলের বাহার। শীতে যত ফুল ফোটে, সারা বছরের আর কোনো মৌসুমে সেভাবে তত ফোটে না। ঢাকার বাসিন্দাদের এমন চোখজুড়ানো সব ফুল আর তার গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে বিজয় বৃক্ষমেলা–২০১৯। মূলত শীতকালীন ফুল, নান্দনিক সব অর্কিড আর অর্নামেন্টাল গাছের পাশাপাশি এখানে মিলছে বিভিন্ন ফলদ, মসলা আর ঔষধি বৃক্ষের চারা।

মেলার আয়োজক ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন নার্সারির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্ল্যান্ট নার্সারিমেন সোসাইটি। মেলায় সোসাইটির সদস্য মোট ৪২টি নার্সারির স্টল জায়গা পেয়েছে। প্রদর্শনীর পাশাপাশি এই স্টলগুলো থেকে নানা জাতের ফুল–ফলের চারা, সার–বীজসহ বাগান তৈরির উপকরণ কেনার ব্যবস্থা আছে। মেলাটি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গতকাল সন্ধ্যায় হীরা নার্সারির স্টলে নজর কাড়ে দেশি বেগুন ফুলের মতো দেখতে বেগুনি রঙের চ্যাপারাল নাইটসেট, বিভিন্ন ধরনের বনসাই, স্থলপদ্ম ও নানা রঙের অর্কিডের জোগান। নার্সারির স্বত্বাধিকারী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, অর্কিডগুলো সাধারণত ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা। আর দেশি ফুলের চারার বেশির ভাগ তিনি উৎপাদন করেন আশুলিয়ায় ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলা নার্সারিতে।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগ ব্যস্ত ছিলেন ফুটন্ত ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। কেউ কেউ দরদাম করে হাতে তুলে নিচ্ছিলেন পছন্দের ফুল–ফলের চারা ও বাগান করার উপকরণ।

এদিকে রিকল গ্রিন নামের আরেকটি স্টলে দেখা মিলল গোলাপের বাহারি সব জাত। হলুদ রঙের প্যারাডাইস, টকটকে লাল কুইন, ডায়মন্ড আর গাঢ় গোলাপি রঙের সিটিবেল মনোযোগ কাড়ে অনেক দর্শনার্থীর। রিকলগ্রিন পল্লবীতে নিজস্ব শোরুমের পাশাপাশি উৎপাদিত চারা অনলাইনেও বিক্রি
করে থাকে।

কথা হয় মেলার আয়োজক বাংলাদেশ প্ল্যান্ট নার্সারিমেন সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ রেজার সঙ্গে। সোসাইটির উদ্যোগে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই মেলায় লোকসমাগম নিয়ে খানিকটা খেদ প্রকাশ করেন তিনি। তবে তাঁর আশাবাদী মন বলছে, চেষ্টার ভেতর দিয়ে একসময় এই বার্তা নিশ্চয়ই নগরবাসীর কাছে পৌঁছে যাবে। তাঁর ভাষ্য, ‘যদি এই শহরটাকে আমরা সবুজ দেখতে চাই, তাহলে নার্সারিগুলোকেও লাগবে। তাই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারেরও বিষয়টি মমতার চোখে দেখা উচিত।’