রবিশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছেন কাদের: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বিএনপি।

বিএনপি বলছে, তাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ওবায়দুল কাদের প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে ‘ভারত তোষণনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থযোগ্য নয়। তিনি মূলত ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রবিশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

২৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২০০১ সাল থেকে যে মাইনরিটি পারসিউকিউশন এ দেশে হয়েছে, এটা কেবলমাত্র একাত্তরের বর্বরতার সঙ্গেই তুলনীয়। কাজেই এখানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো উপায় নেই। বিএনপি যতই সত্যকে চাপা দিতে চাক, আপনারা জানেন, সাংবাদিকরাও জানেন, তখন কীভাবে মাইনরিটির ওপর অত্যাচার হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়। ওই অবস্থায় মাইনরিটিদের (সংখ্যালঘু) দেশ থেকে পলায়ন করাই ছিল স্বাভাবিক।’

ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহস বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের অমিত শাহর বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এ অবস্থান নিয়ে তিনি জাতিকে ক্ষুব্ধ করেছেন। ওবায়দুল কাদের, অমিত শাহ, ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রবিশ কুমার বাংলাদেশ, বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বৈষম্যমূলক, ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী।

বিএনপির মহাসচিব ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি এবং আপনার অবৈধ দেশের স্বার্থবিরোধী সরকার অমিত শাহর বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে শুধু এ দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেননি, একই সঙ্গে সিএএ ও এনআরসির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বার্থহানিকর সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।’ ওবায়দুল কাদেরে বক্তব্যকে ‘ভারত তোষণনীতি’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওবায়দুল কাদের বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থযোগ্য নয়। তিনি মূলত ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রবিশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ভারতের এ আইন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সিএএ ও এনআরসির মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। কারণ ভারতের অন্যতম বড় সীমান্তবর্তী দেশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেছিলেন প্রিয়া সাহা। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ারও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তখন দেশের মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশ দেন। ভারতকে খুশি করতে বর্তমান সরকার নতজানু। অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার বিদেশি প্রভুদের কাছে জনগণের স্বার্থ বিক্রি করতে পিছপা হবে না।’

জন্মসূত্রে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক ভারত থেকে এলে তাঁকে গ্রহণ করা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে পুশ ব্যাক, পুশ ইন হচ্ছে। বাংলাদেশকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।