পিঠার নাম হৃদয়হরণ, লাভবার্ডস

দৌলতপুরের নজিবপুরে গ্রামীণ পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতায় নানা রকম পিঠা।  প্রথম আলো
দৌলতপুরের নজিবপুরে গ্রামীণ পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতায় নানা রকম পিঠা। প্রথম আলো

কামরাঙা, ডিমসুন্দরী, হৃদয়হরণ, খরগোশ, লাভবার্ডস, বেণি, সই, বকুল, জামাই, বউ, নয়নতারা, শামুক, মাছ, মনচুরি, বিছুতি, হাঁস, পাখি, কবুতর, লবঙ্গলতিকাসহ আরও কত নাম। এগুলোর প্রায় সবই পরিচিত নাম। কিন্তু এসব যে শীতের পিঠার নাম, তা আমরা কজনই–বা জানি। 

এ রকম হরেক বাহারি নামের জমজমাট পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে গেল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নজিবপুর গ্রামে। নজিবপুর, দাইড়পাড়া, রওশনপুর—এই তিন গ্রাম মিলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনডিআর আলোকিত সংস্থার উদ্যোগে গ্রামগুলোর গৃহিণীরা এই পিঠা উৎসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। 

উৎসবে ৩০ জন গৃহিণী সর্বোচ্চ ৭১ রকমের বাহারি রকমের পিঠা তৈরি করে প্রদর্শন করেন। গত বুধবার দিনব্যাপী আয়োজনে পিঠা উৎসবে আগত দর্শনার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু পিঠা তৈরি ও প্রদর্শন করেন প্রতিযোগিরা। পিঠা উৎসবে অংশ নেওয়া গৃহিণীরা জানান, এই উৎসব ঘিরে তাঁরা যেসব পিঠা তৈরি ও প্রদর্শন করছেন, সেগুলো সচরাচর তাঁদের বাড়িতে তৈরি হয়ে থাকে। তবে এই প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে সবাই চেষ্টা করেছেন যত রকমের পিঠা তৈরির কৌশল জানেন, সেগুলো তৈরি এবং প্রদর্শনের। এই উৎসবে ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁরা আনন্দিত। 

সন্ধ্যায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া গৃহিণীদের মধ্য থেকে বিচারকেরা তিনজনকে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘোষণা করেন। তাঁদের হাতে অর্থ ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।  প্রতিযোগিতায় প্রথম হন সালমা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন ধরে কষ্ট করে ৬৫ প্রকারের পিঠা বানানো হয়েছিল। এতে ভাগনে জান্নাতুল নাঈম সহযোগিতা করেছেন। তিন বছর ধরে তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এবারই প্রথম হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। 

এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ গৃহিণী ফাওজিয়া খাতুন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য অনেক পিঠা হারিয়ে যেতে বসেছে। উদ্দেশ্য ছিল গৃহিণীদের এই উৎসবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া সুস্বাদু পিঠা ফিরিয়ে আনা। এতে অনেকটাই সফল হয়েছেন। পিঠা উৎসবে আগত দর্শনার্থীরা জানান, এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকলে গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া অনেক পিঠা আবার ফিরে আসবে। 

পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এ এস এম মুসা কবির প্রথম আলোকে বলেন, বিনোদনের পাশাপাশি গ্রামের লোকজন নতুন নতুন পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছে। এই ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।