ফের আমরণ অনশনে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা

ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে খুলনার পাটকল শ্রমিকেরা অনশনে যান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে খুলনার পাটকল শ্রমিকেরা অনশনে যান। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে তিন দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় আবারও আমরণ অনশনে যাচ্ছেন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা। আগামী রোববার দুপুর থেকে নিজ নিজ মিলগেটের সামনে ওই কর্মসূচি শুরু হবে। 

এর আগে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে নিজ নিজ মিলগেটের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন শ্রমিকেরা। তীব্র শীতে টানা চার দিন ওই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। কর্মসূচি চলার সময় এক শ্রমিকের মৃত্যুসহ দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে পাটকলের শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক হয়। তৃতীয় দফায় ওই বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রীসহ পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে শ্রমিকনেতারা বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের ব্যাপারে শ্রম প্রতিমন্ত্রী আরও এক মাস সময় চেয়েছেন। কিন্তু ওই এক মাস পর আসলেই মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউই। শুধু সময়ক্ষেপণ করতে এক মাসের কথা বলা হচ্ছে। 

সর্বশেষ শ্রমিকেরা যে ব্যানারে আন্দোলন করছেন, সেটি হলো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন ছিলেন ওই বৈঠকে। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। এক মাসের সময় চাওয়া হয়েছে কিন্তু শ্রমিকদের পক্ষে ওই সময় দেওয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ 

তীব্র শীতে শ্রমিকেরা অনশন কর্মসূচি পালন করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের এখন মাত্র একটিই চাওয়া, আর তা হলো মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন। তাঁদের সেই দাবি পূরণ না হলে তাঁরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য। 

>খুলনা অঞ্চলের পাটকল
আগামী রোববার দুপুর থেকে নিজ নিজ মিলগেটের সামনে ওই কর্মসূচি শুরু করবেন পাটকলশ্রমিকেরা

১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সাংসদ মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসে তিন দিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকেরা। রাত ১টার দিক থেকে একে একে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে যান। 

ওই রাতে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সভাকক্ষে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে সভা করার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকনেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন। ওই আশ্বাসে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকেরা। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতভর শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিকনেতাদের দফায় দফায় আলোচনা চলে। এ সময় নেতারা চাইলেও শ্রমিকেরা অনশন ভঙ্গ করতে নারাজ ছিলেন। তবে রাতেই তাঁরা বাড়িতে ফিরে যান। 

শ্রমিকেরা বাড়িতে ফিরলেও অনশনস্থলের প্যান্ডেল সেভাবেই থেকে যায়। গত কয়েক দিনে তা সরানো হয়নি। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয় শ্রমিকনেতাদের কাছে। ওই দিন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ভালো কোনো ফল হয়নি। তবে প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠকও ব্যর্থ হয়। 

কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা অনশন ভঙ্গ করার জন্য নেতাদেরই দোষারোপ করছেন। শ্রমিকেরা বলছেন, ওই সময় প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা না হলে এত দিনে তাঁদের দাবি সরকার মেনে নিতে বাধ্য হতো। 

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নেতারা যা চাইবেন শ্রমিকেরা তা করতে প্রস্তুত আছেণ। শ্রমিকদের আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে মজুরি কমিশনের বিষয়টি। সর্বশেষ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপারটিতে শ্রমিকেরা এখন অনেকটা ক্ষিপ্ত। আবারও তাঁরা আন্দোলনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। 

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, তাঁরা খুলনায় ফেরার পরিকল্পনা করছেন। কাল শনিবার সকাল ১০টায় নিজ নিজ মিলগেটে শ্রমিক সভা হবে। ওই সভায় গতকাল রোববার দুপুর থেকে আবারও আমরণ অনশন শুরু করবেন শ্রমিকেরা। কর্মসূচি পালন করতে শ্রমিকেরা প্রস্তুত আছেন। ওই কর্মসূচি সফল করতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের নেতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকেরা। বিক্ষোভ মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট, গেটসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেন তাঁরা। ওই কর্মসূচি খুলনা অঞ্চলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টি পাটকলের শ্রমিকেরা অংশ নেন। শুধু যশোরের কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকেরা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেননি।