একটি আংটির জন্য...

বিয়ের আসরে বরকে সোনার আংটি দেননি শ্বশুর-শাশুড়ি। সেই থেকে ছেলের মায়ের ক্ষোভ। পুত্রবধূকে ঘরে তোলার পরপরই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। ছেলেকে বকাঝকা করলেন মা। অপবাদ দেওয়া শুরু হলো নববধূকেও। ভালো লাগেনি এই অন্যায়ের। তাই প্রাণ দিয়েই এর নীরব প্রতিবাদ জানালেন ছেলে।

ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের। গত বুধবার বিকেলে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন আল আমিন নামের ওই বর।

কাজের প্রয়োজনে কিশোর বয়সে আল আমিন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ছিলেন টানা আট বছর। ছয় মাস আগে একই ইউনিয়নের টানকৃষ্ণনগর গ্রামের মারুফা বেগম নামের এক নারীকে পারিবারিক সম্মতিতে মুঠোফোনে বিয়ে করেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে আল আমিন দেশে ফেরেন। ২০ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শ্বশুর-শাশুড়ির আশীর্বাদ নেন আল আমিন। এ সময় তাঁকে স্বর্ণের আংটি দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন আল আমিনের মা মর্জিনা বেগম। পুত্রবধূকে ঘরে ওঠানোর দিন থেকে এ নিয়ে তাঁকে অপবাদ দেওয়া শুরু হয়। ছেলেকেও ছেড়ে কথা বলেননি মা।

মারুফা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্বর্ণের আংটি দেওয়া হয়নি বলে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া টানা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আল আমিন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

আল আমিনের বাবা সেলিম মিয়া একসময় পেশায় পিকআপ ভ্যানচালক ছিলেন। তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন। আল আমিনের পাঠানো টাকায় পরিবারের সচ্ছলতা আসে।

জানা যায়, দুই পরিবারের সম্মতিতে স্ত্রীকে উঠিয়ে আনার আনুষ্ঠানিকতার তারিখ নির্ধারিত হলেও চাওয়া–পাওয়া নিয়ে কোনো কথা হয়নি। মারুফাকে জামাইয়ের হাতে উঠিয়ে দেওয়ার সময় আল আমিন শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করেন। তখন শাশুড়ি তাঁর হাতে এক হাজার টাকার একটি নোট তুলে দেন। শ্বশুরকে সালাম করার পর দেওয়া হয় ৫০০ টাকার একটি নোট। কিন্তু আল আমিনের পরিবারের সদস্যরা ওই মুহূর্তে স্বর্ণের আংটি আশা করেছিলেন।

মারুফা বলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে নিয়ে ঘরে উঠতেও পারেননি। শুরু হয়ে যায় শাশুড়ির বকাবকি। তাঁর স্বামীকে গালমন্দ করা হয়। টানা চার দিন চলে এভাবে নানা অপবাদ।

মারুফার ভাষ্য, এমন পরিস্থিতি দেখে স্বামী তাঁকে বলছিলেন, ‘এমন হলে কেমনে চলবা।’ আর বলছিলেন, ‘এত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠাই, মা আমার সুখটা বুঝল না।’ এ নিয়ে তাঁর (মারুফা) পাশাপাশি আল আমিনও মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন। শুধু একটি স্বর্ণের আংটির সূত্র ধরে তাঁর স্বামীর জীবন গেছে।

এ বিষয়ে মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আংটি দেওয়া আমাদের এলাকার রেওয়াজ। না দিলে অমঙ্গল হয়। সেই কারণে দুকথা শুনিয়েছি। পরে আমার টাকা দিয়ে আংটি কিনে দিয়েছি। এখন ছেলে কেন আত্মহত্যা করল তা বুঝে উঠতে পারছি না।’ বাবা সেলিম মিয়া বলেন, ‘কারে দোষ দিমু আমি। কোন কারণে ছেলে আমার এই কাম (আত্মহত্যা) করল কে জানে।’

বাড়ির একটি ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে আনেন ভৈরব থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আল আমিনের মৃত্যুর জন্য মেয়েপক্ষ দায় চাপাচ্ছেন ছেলের মায়ের ওপর। আবার আল আমিনের পরিবারের সদস্যরা তা অস্বীকার করছেন। তাই অপমৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।