বিষটোপে পদ্মায় ভাসছে পরিযায়ী পাখি

মৃত চখার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাঙচিল। ছবি: হাসনাত রনীর সৌজন্যে
মৃত চখার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাঙচিল। ছবি: হাসনাত রনীর সৌজন্যে

তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে মঙ্গোলিয়া থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে এসেছিল চখাটি। কিন্তু প্রাণে বাঁচতে পারেনি। পদ্মার পানিতে মৃত অবস্থায় ভাসছিল। এর পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল একটি গাঙচিল। হয়তো ভাবছিল, কিছুক্ষণ পর তার পরিণতিও হতে পারে চখা বা চকাচকির মতো। গাঙচিলটির ভাগ্যে কী ঘটেছিল, সে খবর আর জানা যায়নি। দূর থেকে মৃত আর জীবিত দুই পাখির ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন রাজশাহীর পাখিপ্রেমী হাসনাত রনী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভেসে থাকা পাখিটি বিষটোপের শিকার হয়েছে। একশ্রেণির পাখিশিকারি বিষটোপ দিয়ে রাজশাহীতে এভাবেই পাখি শিকার করছে। গত বুধবার সকালে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে অল্পখানেক জায়গাজুড়ে আট-দশটি পাখিকে মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখা গেছে।

ইনাম আল হকের ‘পাখিদেরও আছে নাকি মন’ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘চকাচকি অথবা চখা যে নামেই ডাকুন, এর পোশাকি নাম খয়রা চকাচকি। বাঙালি কবির পছন্দের বুনোহাঁস।’

পাখি গবেষকদের মতে, পরিযায়ী পাখিদের জীবনে দেশ বলে কিছু নেই। আছে মহাদেশ, মহাসাগর, মরুভূমি, বনভূমি, মালভূমি, প্রান্তর, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, হ্রদ।

প্রতিবছর রাজশাহীর পদ্মা নদী পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে। ইদানীং মানুষের মধ্যে পাখি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ার কারণে সচরাচর প্রকাশ্যে বন্দুক নিয়ে পদ্মায় পাখিশিকারিরা নামতে পারে না। কেউ বন্দুক নিয়ে পদ্মা নদীতে নামার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে মানুষ খবর পৌঁছে দেয়। তারা অভিযান চালায়। কিন্তু ধরা যাচ্ছে না কারা পাখি মারার জন্য বিষটোপ দিচ্ছে।

পদ্মা নদীতে বিষটোপের শিকার চখা। ছবি: হাসনাত রনীর সৌজন্যে
পদ্মা নদীতে বিষটোপের শিকার চখা। ছবি: হাসনাত রনীর সৌজন্যে

পাখিপ্রেমী হাসনাত রনী তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, পুঁটি মাছের পেটের ভেতরে দানাদার বিষ ভরা হয়। তারপর খুব ভোরের দিকে এই পাখিশিকারিরা পদ্মা নদীর যে এলাকায় পাখিরা বিচরণ করে সেখানে ছিটিয়ে দিয়ে যায়। পাখি মাছ খেয়ে মরে পড়ে থাকে। সকালে এই পাখি কুড়িয়ে নিয়ে যায় শিকারিরা। মরা পাখিগুলোকে কেটে সদ্য ধরা পাখি হিসেবে একটি বিশেষ শ্রেণির ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে।

গত বুধবার পদ্মা নদীতে মরা চারটি চকাচকি ও চারটি পিয়াং হাঁসকে পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। হয়তো আশপাশে আরও অনেক পাখিই এভাবে মরে পড়ে আছে। হাসনাত রনী বলেন, ‘মরা পাখিগুলোকে দেখে এত খারাপ লাগছিল যে, কাছে যেতে পারিনি। দূর থেকে ছবিগুলো তুলেছি।’

বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধনের খবর শুনে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, চকাচকি প্রায় আট-দশ হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে মঙ্গোলিয়া, তিব্বত-তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে আসে। জীবন বাঁচাতে একটু উষ্ণতার জন্য এ দেশে এসে যদি ওদের এভাবে মরতে হয় সেটা দুঃখজনক। বন্দুকধারীদের ধরা যায়। কিন্তু যারা বিষটোপ দিয়ে পাখি মারে, তাদের ধরা যায় না। হয়তো পকেটে করে বিষটোপ নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, পাখি নিধনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক প্রতিবেশী যেন আরেক প্রতিবেশীকে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোনো অনুষ্ঠানে যদি পাখি হত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয় যে, কেউ এভাবে পাখি হত্যা করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হবে। তাহলে শিকারিরা ভয় পাবে, অন্যরাও সচেতন হবে।