আজ থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে

আজ থেকে মানুষের শীতের কষ্ট বাড়তে পারে। ফাইল ছবি
আজ থেকে মানুষের শীতের কষ্ট বাড়তে পারে। ফাইল ছবি

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে রাজধানীবাসীর অনেকেই অবাক হয়েছেন। রাস্তায় থকথকে কাদা ও গর্তে জমে থাকা পানি দেখে বোঝা গেছে, রাতে বৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত দেশের অর্ধেকের বেশি স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। কনকনে ঠান্ডায় হঠাৎ বৃষ্টি মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, গত দুই দিনে বৃষ্টি যা হওয়ার হয়ে গেছে। আজ আর দেশের কোথাও তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে আজ শনিবার থেকে শীতের দাপট আরেক দফা বাড়তে পারে। দেশের বেশির ভাগ স্থানের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে যে শৈত্যপ্রবাহ চলছে, আজ তা আরও নতুন নতুন এলাকায় বিস্তৃত হতে পারে। রাজধানীতেও শীতের দাপট বাড়তে পারে। সকাল থেকে দিনভর কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে টানা চার দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। গতকাল সকালে সেখানে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এখানকার শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা রংপুর ও নীলফামারীর মানুষ। গতকাল এ দুই জেলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর শহরে বিভিন্ন সড়কের পাশে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। শীত ও বৃষ্টিতে যশোরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে এই জেলাতেই, ১৪ মিলিমিটার। আর যশোরের তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি স্বাভাবিক লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে আসা মেঘ ওই বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আজ দেশের বেশির ভাগ স্থানে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আজ থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। এতে মানুষের শীতের কষ্ট বাড়তে পারে।

এদিকে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের বায়ুর মান আরও খারাপ হয়েছে। মূলত কোথাও তাপমাত্রা কমে গেলে আর সেখানে ইটভাটা ও নির্মাণকাজের ধুলার পরিমাণ বেশি থাকলে বায়ুর মান খারাপ হয়। তবে বৃষ্টি হলে বায়ুর মান কিছুটা ভালো হয়ে থাকে। কারণ, বৃষ্টির কারণে বাতাসে থাকা ভারী বস্তুকণাগুলো ঝরে পড়ে। গত তিন দিন ধরে রাজধানীর বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর থেকে দুর্যোগপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

>

দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃষ্টি না হলেও তাপমাত্রা কমতে পারে। রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ঢাকার বায়ুর অবস্থা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অর্থাৎ হেজারডাস বা দুর্যোগপূর্ণ ছিল। আর বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দূষিত বায়ুর দিক থেকে ঢাকার অবস্থান এক থেকে দুইয়ের মধ্যে ছিল। অবশ্য ভারতের রাজধানী দিল্লি ও মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটর কখনো কখনো ঢাকাকে টপকে এক নম্বর স্থান দখল করে নেয়।

এদিকে রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর ছিন্নমূল ও ফুটপাতে থাকা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে। এমনিতে শীতের কারণে তারা কষ্টে ছিল। এর সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হওয়ায় তাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে যারা শীতের কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করতে বসে তারাও বিপদে পড়ে।

গতকাল ঢাকায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে ৫, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ৯, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১০, খুলনা, মোংলা ও কুমিল্লায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]