হাঁসের নাম মানিকজোড়

মানিকজোড় বা চখাচখি হাঁস। পদ্মার চর।  ছবি: আদনান আজাদ
মানিকজোড় বা চখাচখি হাঁস। পদ্মার চর। ছবি: আদনান আজাদ

চিংড়িঘেরটার পাড় জুড়ে সারি সারি পেঁপে আর নারকেলগাছ। একটা ফুট দশেক উঁচু নারকেলগাছের মাথায় সুতোর এক প্রান্ত ধরে বসে আছে এক ঘেরশ্রমিক বালক। সুতোর ও মাথার ফাঁস-ফাঁদটা সে কায়দা করে পেতে রেখেছে মরা কচুরিপানার দঙ্গলের ওপরে। কদিন ধরে ঠিক দুপুরবেলার নিরিবিলি সময়ে এক জোড়া সুন্দর বুনোহাঁস এসে নামে ঘেরের জলে। জলছোঁয়া নরম মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে চক্কর দেয় ঘেরের চারপাশে, খাবার খায়। ও পাশের মুক্ত জলাশয় থেকে বালক শুকনো কচুরিপানা এনে ঢিবি বানিয়ে তার ওপরে ফাঁদ পেতে বসেছে আজ। ঢিবিতে হাঁস দুটো বিশ্রামের জন্য উঠলে সুতো ধরে টান দিয়ে বুনোহাঁস আটকাবে।

দুপুরের একটু আগেই এল হাঁস দুটি। প্রায় ৩০ মিনিট বাদে ঢিবিতে উঠল দুটি। একটি হাঁস ফাঁদের ভেতরে পা দিতেই বালকটি টান দিল জোরে। অমনি ঝপাং শব্দে উড়ল দুটিই। একটার আটকেছে একখানা পা। অন্যটি থেমে থেমে ‘কংকা কংকা’ বলে ডাকছে আর বৃত্তাকারে ঘুরছে। বালক সুতো হাতেই ঝাঁপ দিল জলে। পাঁচ-সাত মিনিট প্রাণান্ত চেষ্ট করেও সে পাকড়াও করতে পারল না শিকার। যখন ধরিধরি, তখন হঠাৎই বালকের হাত থেকে সুতো ফসকে সুতোসহ উড়াল দিল হাঁসটি। ওপরের উড্ডীয়মান হাঁসটি নিচে নেমে এসে সঙ্গীসহ উড়ে চলে গেল। সুতো ঝুলছে হাঁসটির পায়ে।

যদি বন্দুকের গুলিতে মারা পড়ত হাঁসটি, তাহলেও নিজের মৃত সঙ্গীকে ফেলে যেত না অন্য হাঁসটি। সেটিও মারা পড়ত গুলিতে। এটা আমি বললাম আমার অভিজ্ঞতার আলোকে। প্রেমিক-প্রেমিকা কেউ কাউকে ফেলে যেতে চায় না। হয়তোবা ভালোবাসার গভীরতার জন্য। তাইতো বাগেরহাট অঞ্চলে এটি ‘মানিকজোড় হাঁস’ নামে পরিচিত। প্রচলিত নাম চখাচখি হাঁস ও লালা হাঁস। ইংরেজি নাম Ruddy Shellduck. বৈজ্ঞানিক নাম Tadorna ferruginea. দৈর্ঘ্য ৬৪-৬৬ সেমি। ওজন দেড় কেজি।

চখাচখি বা মানিকজোড় হাঁস আমাদের দেশে শীতের পরিযায়ী পাখি। হাওর, বঁাওর, দ্বীপ, চর, নদীর তীর ও বিলে–ঝিলে এর দেখা মেলে। ছোট ছোট ঝাঁকে চলে। মূল খাদ্য জলজ আগাছা, উদ্ভিদের কন্দ, মাছ, ব্যাঙ, ছোট শামুক ও পোকামাকড়।