বিজ্ঞাপন দিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নিয়োগের অভিযোগ তুললেন গণপূর্তের প্রকৌশলী

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত জয়নুল আবেদীনের বিজ্ঞাপন
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত জয়নুল আবেদীনের বিজ্ঞাপন

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের অভিযোগ। তাও আবার পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন আকারে খোলা চিঠি প্রকাশের মাধ্যমে! এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জয়নুল আবেদীন।

গতকাল শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় এই ‘খোলা চিঠি’ প্রকাশিত হয়। সেখানে জয়নুল আবেদীন প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়ন থেকে ‘বঞ্চিত’ করে তাঁর প্রতি ‘অবিচার’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

‘খোলা চিঠির’ শুরুতে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে ৩৬ (ছত্রিশ) বছরের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সততা এবং দূরদর্শিতার আলোকে বর্তমান পিডব্লিউডিকে সুসংহত করার জন্য ০২ (দুই) মাসের জন্য নিম্নস্বাক্ষরকারীকে পদায়ন প্রসঙ্গে’।

চিঠির ভেতরে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী বিগত জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিঃ এবং ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রিঃ সনে প্রায় ০২ (দুই) মাসের জন্য গ্রেডেশন অনুযায়ী গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কথা থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে করা হয়নি। আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি পিআরএল-এ থাকব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে সদয় বিবেক বিবেচনা ও নির্দেশনার জন্য খোলা চিঠির মাধ্যমে পেশ করা হলো।’

এ পর্যায়ে চিঠিতে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়ন থেকে বঞ্চিত করে তাঁর প্রতি ‘অবিচার, জুলুম ও অন্যায়’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জয়নুল আবেদীন।

এরপরই জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এতৎসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণসহ তথ্যাদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে মাননীয় মন্ত্রী এবং সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।’ এ ছাড়া চিঠিতে তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য ইউটিউবের একটা ভিডিও লিংকও প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তি আকারে চিঠি প্রকাশের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এই কথাগুলো আগেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, গণপূর্তমন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছি। কিন্তু সব কথা তো সরাসরি বলা যায় না। খোলা চিঠিতেই কেবল সবকিছু খোলা মনে বলা যায়। তাই চিঠির আশ্রয় নেওয়া।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিটি আমি দেখেছি। তবে প্রমোশন (পদোন্নতি) কিন্তু অধিকার না। এর জন্য তিনি যোগ্য কি না, সেটাও বিবেচ্য। সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ) বলেই তাঁকে প্রমোশন দিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু যে খোলা চিঠি তিনি প্রকাশ করেছেন, তা রেওয়াজবহির্ভূত ও আচরণবিধি পরিপন্থী।’ সাবেক এই আমলা আরও বলেন, ‘তিনি (জয়নুল আবেদীন) সংক্ষুব্ধ হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন অথবা আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।’