কিছুক্ষণ পর আসবেন বলে আর আসেননি বাবা

তছলিমা জান্নাত
তছলিমা জান্নাত

গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা। রাস্তার ধারে কাঁদছে এক শিশু। হাতে আটশো টাকা। বাড়ি ফেরার পথে কান্নার আওয়াজে চোখ আটকাল হাবিবুর রহমানের। কেন কাঁদছে জিজ্ঞেস করতে আরও বেশি কান্নায় ভেঙে পড়ল শিশুটি। বাবা-মায়ের নাম বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারে না। এমন অবস্থায় হাবিবুর শিশুটিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে থানা-পুলিশ। পরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হলো শিশুটির।

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার কোরক বিদ্যাপীঠের সামনের দৃশ্য এটি। হাবিবুর রহমান চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক।

শিশুটি বলে, তার নাম তছলিমা জান্নাত (৬)। তার বাবার নাম মো. ছলিম আর মায়ের নাম লায়লা বেগম। দুই বছর আগে তার মা মারা গেছে। সে কোন গ্রামের বাসিন্দা বলতে পারে না। তার বাবা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করে। যখন যেখানে ব্যবসা করতেন, তাদের সঙ্গে করে সেখানে নিয়ে যেতেন।

শিশুটির ভাষ্য, গতকাল সকালে বাবা বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে তাকে ও ছোট ভাই আব্দুন নূরকে (৪) নিয়ে বের হয়। দুপুর ১২টার দিকে তার হাতে আটশো টাকা দিয়ে স্কুলের সামনে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় বাবা বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ পরে আসব। তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস।’ রাত ১০টা বাজলেও বাবা আর আসেননি।

কাঁপা গলায় শিশুটি বলে, তার মা মারা যাওয়ার পর বাবা খুব নির্যাতন করতেন। যখন-তখন মারধর ও মরে যাওয়ার অভিশাপ দিতেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে শিশুটিকে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। তখন শিশুটি কাঁদছিল আর তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার জ্বর আসে। আজ সকালে তাকে চকরিয়া থানায় নিয়ে যান।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আজ দুপুরে শিশুটিকে কক্সবাজার রুমালিয়াছড়া শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়েছে। কেউ শিশুটির অভিভাবক ও গ্রামের ঠিকানা জানলে পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারবেন।