পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আটকে আছে সড়কে

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার চীনামাটির পাহাড় পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ছবি: আনোয়ার হোসেন
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার চীনামাটির পাহাড় পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ছবি: আনোয়ার হোসেন

ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া। গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা এ উপজেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। তবে যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ধোবাউড়ার অবস্থান জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। আর উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্ত। ধোবাউড়ার কাছে রয়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর। এই দুই উপজেলার বিশাল অংশজুড়ে দৃষ্টিনন্দন গারো পাহাড় ও চীনামাটির পাহাড়। রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর স্বচ্ছ পানির সুমেশ্বরী নদী। এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু মানুষকে টানে। তাতে কেবল বাদ সাধে বেহাল সড়ক।

ময়মনসিংহ থেকে ধোবাউড়া হয়ে বা শ্যামগঞ্জ বাজার ও নেত্রকোনার পূর্বধলা হয়ে সড়কপথে গারো পাহাড়ে যাওয়া যায়। তবে দুটি পথই খুব দুর্গম। এসব সড়ক দিয়েই পর্যটকেরা গারো পাহাড়ে যান। সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় মোটরসাইকেলে যাওয়াই তুলনামূলক সহজ। ধোবাউড়া শহর ও কলসিন্দুর বাজারে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ধোবাউড়া উপজেলা হয়ে গারো পাহাড়ে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, গারো পাহাড়ের সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই হাতে গোনা কিছু পর্যটক আসেন। তবে বেশির ভাগই ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও আশপাশের জেলার বাসিন্দা। গারো পাহাড়ের আশপাশে এখনো পর্যটনশিল্প বিকাশ লাভ করেনি। যাতায়াতব্যবস্থার ভগ্নদশার পাশাপাশি এখানে পর্যটকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। তবে আশার কথা, স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি পর্যটন খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ধোবাউড়ার বিভিন্ন বাজারে এখন একটি আবাসিক হোটেলের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ থেকে ধোবাউড়া শহর পর্যন্ত সড়কটির তারাকান্দা উপজেলার কেন্দুয়া বাজার থেকে ধোবাউড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশ বেহাল। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। সঙ্গে ধুলার অত্যাচার। ধোবাউড়া শহর থেকে কলসিন্দুর বাজার হয়ে গারো পাহাড়ে যাওয়ার প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগই ভাঙাচোরা। হাতে গোনা কিছু তরুণ পর্যটককে এসব ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।

চীনামাটির পাহাড় পর্যটকদের অন্যতম আগ্রহের স্থান। ধোবাউড়া ও নেত্রকোনার দুর্গাপুরজুড়ে রয়েছে দু-তিনটি চীনামাটির পাহাড়। সাদা রঙের এ পাহাড় দেখতে ছুটে যান পর্যটকেরা। তবে পাহাড়ের আশপাশে নেই কোনো দোকানপাট। এমনকি পর্যটকদের জন্য নেই নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ময়মনসিংহ শহরতলির দাপুনিয়া এলাকা থেকে গারো পাহাড় দেখতে এসেছিলেন কয়েকজন তরুণ। তাঁদের একজন মো. রায়হান বললেন, ‘গারো পাহাড় দেখতে আসার আগেই জেনেছিলাম, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। আসার পর বুঝতে পেরেছি, রাস্তা কতটা খারাপ। তবে চীনামাটির পাহাড়ের ওপর দাঁড়ালে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এতে যাতায়াতের কষ্ট কিছুটা ভুলে থাকা যায়।’

চীনামাটির পাহাড়ের কাছে ছোট্ট বাজার বিপিনগঞ্জ। সেখানে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান। রজব আলী নামের একজন দোকানি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ চীনামাটির পাহাড় দেখতে আসছেন। কিন্তু সে তুলনায় পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠছে না।

গারো পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। সেটি নেত্রকোনার দুর্গাপুর, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট উপজেলা হয়ে চলে যাবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নকুগাঁও স্থলবন্দরে। দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত সড়ক অনেকখানি নির্মাণ হয়েছে। ধোবাউড়ার জয়রামপুর এলাকায় সীমান্ত সড়কটির নির্মাণকাজ চলমান। গাছুয়াপাড়া এলাকায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়া সীমান্ত সড়কটির ওপর স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন ধরিয়ে ধান সেদ্ধ করছিলেন। এতে সড়কটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা এ গারো পাহাড় ও সুমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায়ও। সীমান্ত সড়ক দিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় সেখানে। গারো পাহাড় আর সুমেশ্বরী নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আদিবাসী ও বাঙালি মানুষের জীবনযাপন পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধোবাউড়া উপজেলার পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা ইতিমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ প্রস্তাবে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও ১৫ একর জমিতে বিশেষ পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার দাবি রয়েছে। এসব প্রস্তাব অনুমোদন পেলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।’