রাজনীতিতে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে: গণপূর্তমন্ত্রী
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘বৈষয়িক উন্নয়ন বাংলাদেশে অনেক হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এসেছে অনেকটাই। কিন্তু নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মুক্তির কাঙ্ক্ষিত জায়গায় আমরা এখনো পৌঁছাতে পারিনি। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। জাতিকে এ অবক্ষয় থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আলোকিত ৫০ বছর’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে একটি খারাপ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। রাজনীতিতে এলেই বিত্তবৈভব, বাড়ি-গাড়ি, কয়েকটি কোম্পানির মালিক, শত শত কোটি টাকার মালিক হতে হবে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, শিক্ষার্থীদের সততা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমের শিক্ষা দিতে হবে। এ চারটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারলে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা জাতির ভবিষ্যৎ রচনায় স্বপ্ন দেখতে পারি। এ স্বপ্ন দেখতে না পারলে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগ এবং আমাদের মহান নেতৃবৃন্দের আত্মোৎসর্গ অর্থহীন হয়ে যাবে।’
সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গে শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাজনীতিতে একটি খারাপ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তা হলো, রাজনীতিতে এলেই বিত্তবৈভব, বাড়ি-গাড়ি, কয়েকটি কোম্পানির মালিক, শত শত কোটি টাকার মালিক হতে হবে। পদ-পদবি পেতেই হবে। এটা রাজনীতির মূল সংস্কৃতি নয়। নিজেকে উৎসর্গ করার নাম রাজনীতি। পরার্থে নিজেকে নিবেদন করার নাম রাজনীতি।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় বলা হতো বাংলাদেশ হবে দরিদ্রতাররোল মডেল। অথচ আজ বিশ্ব নেতৃত্ব বলেন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই রোল মডেলের বাংলাদেশকে পরিপূর্ণতা দিতে হলে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ইমারত নির্মাণের মতো বৈষয়িক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীদের সম্পর্কে ঘৃণার উদ্রেক করতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস, ইভ টিজিংকে যাঁরা প্রশ্রয় দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অন্যায়ভাবে সম্পত্তি আরোহণ করা, যেনতেন উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া, যেকোনো মূল্যে সরকারি সম্পত্তি লুণ্ঠন করা-এসব প্রবণতা রুখতে আমাদের মানসিকভাবে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন।’
‘জনগণের জন্য সরকার, সরকারের জন্য জনগণ নয়-শেখ হাসিনা সরকার এ ধারণায় বিশ্বাস করে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা বিস্তারে যদি ভূমিকা রাখতে না পারি তাহলে মন্ত্রিত্ব অর্থহীন হয়ে যাবে। যে জাতি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত নয়, যে জাতি নৈতিকতার মানদণ্ডে উচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে না, তাকে বিশ্বে মূল্যায়ন করে বলা হয়, এ রাষ্ট্র, এ সমাজ অনেক দূর এগোতে পারেনি। একটি শিক্ষিত সমাজই দিতে পারে একটি ভালো রাষ্ট্র। একটি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র দিতে পারে ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার হাতিছানি। সে স্বর্ণালি জায়গায় আমরা সবাইকে নিয়ে পৌঁছাতে চাই।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫০ বছর উদযাপন উৎসবের আহ্বায়ক ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বীরপ্রতিক, মোজাম্মেল হক বীরপ্রতিক, সাবেক ভিপি মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইয়নিয়নের সভাপতি আবু জাফর, কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন, উপাধ্যক্ষ ড. আবেদা সুলতানা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।