কাজে আসছে না 'ওয়্যারহাউস'

আজিমপুরের এই ওয়্যারহাউস খুলতে দেখেননি এলাকার কেউ। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
আজিমপুরের এই ওয়্যারহাউস খুলতে দেখেননি এলাকার কেউ। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

দুর্যোগ মোকাবিলায় নগরের পৃথক নয়টি স্থানে ‘ওয়্যারহাউস’ নির্মাণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এসব ওয়্যারহাউসে অ্যাম্বুলেন্সসহ দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্ধারকাজের প্রাথমিক সরঞ্জাম রাখা হয়েছে।

তবে এসব ওয়্যারহাউসের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, নগরে প্রায়ই ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসব ওয়্যারহাউসের ভূমিকা চোখে পড়ে না। এসব ওয়্যারহাউস পরিচালনায় স্থায়ী লোকবলও নেই।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় এসব ওয়্যারহাউস নির্মাণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসিতে ওয়্যারহাউস করা হয়েছে পাঁচটি, আর ডিএসসিসিতে তিনটি। প্রতিটি ওয়্যারহাউস নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।

আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুনে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ‘আরবান রিলিজিয়েন্স প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তারই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের শুরুতে ডিএনসিসির উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর, মিরপুর-২ নম্বর, মহাখালীর তাজউদ্দীন আহমদ সড়ক, মিরপুর-১০ নম্বর ও কারওয়ান বাজারে এবং ডিএসসিসির সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, খিলগাঁও ও আজিমপুরে ওয়্যারহাউস স্থাপন শুরু হয়। ২০১৮ সালের জুনের দিকে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওয়্যারহাউসগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ও ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার সরঞ্জামাদিসহ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়।

ওয়্যারহাউসগুলো ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা দুটির প্রকৌশল দপ্তর। সূত্র জানায়, স্থাপনা নির্মাণের পর প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি করে দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের প্রধান আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁর নেতৃত্বে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাঁরা এগিয়ে যাবেন। এ জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় অনেককেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের উত্তর-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০০ বর্গফুট আয়তনের জায়গায় একটি ওয়্যারহাউস তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতল এই স্থাপনাটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা স্থাপনাটির প্রধান ফটকে তালা লাগানো। এর প্রধান ফটক বরাবর ওয়্যারহাউস–সংক্রান্ত একটি বড় সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। কিন্তু আশপাশে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশেই ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক কার্যালয়। আজিমপুর, খিলগাঁও, কারওয়ান বাজার, মহাখালী ও মিরপুর-১০ নম্বরে ওয়্যারহাউসগুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে।

গোলাপবাগের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, সাধারণত কোথাও আগুন লাগলে খবর পেয়ে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু সায়েদাবাদে এই ওয়্যারহাউস স্থাপনের পর এখন পর্যন্ত খোলেনি। সব সময়ই স্থাপনাটি তালাবদ্ধ থাকে। এমন অকেজো স্থাপনা না করে ছোট আকারে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করলে ভালো হতো।

ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুল হক বলেন, এই ধরনের ওয়্যারহাউস আঞ্চলিক কার্যালয় ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে স্থাপনাটি নির্মাণের পর এই এলাকায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ ঘটেনি। তাই এর ব্যবহার হয়নি।

মিরপুর-১০ নম্বরে ওয়্যারহাউস–সংলগ্ন একটি ভবনের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, কিছুদিন পরপরই আশপাশের এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারের জন্য তা ব্যবহৃত হয়নি। বড় ধরনের দুর্যোগ সৃষ্টি হলে এই ওয়্যারহাউসের ভূমিকা কী হবে, তা কেউ জানে না।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্প কর্মকর্তার নির্দেশনামতে আমরা অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত ওয়্যারহাউসের সরঞ্জাম মাঠপর্যায়ে ব্যবহার করার দরকার হয়নি।’

ডিএনসিসির প্রকৌশল দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওয়্যারহাউসগুলোতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের উদ্ধার সরঞ্জাম আছে। কিন্তু তা ব্যবহার না করায় এর ওপর ধুলাবালি জমেছে। এভাবে পড়ে থাকলে সরঞ্জামগুলো কার্যকারিতা হারাবে। তাই ফায়ার সার্ভিসের মতো এসব ওয়্যারহাউস পরিচালনায় উদ্যোগ নিতে হবে।

জানতে চাইলে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়্যারহাউসগুলো স্থাপনের পর তা ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবেন। প্রকল্প থেকে শুধু ওয়্যারহাউসের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।