পরিত্যক্ত পানির জারে সবজি চাষে সফলতা
পানি রাখার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের জার নষ্ট হয়ে গেছে। তার ঠিকানা হয় বাতিল-আবর্জনার স্তূপে। তবে এমন পরিত্যক্ত জার সংগ্রহ করে তাতে টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের মৌসুমি সবজি ফলানো হয়েছে। সেগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে বাড়ির বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে। ফলে বাড়তি কোনো জায়গাও লাগছে না। তেমন কোনো খরচও নেই। ব্যক্তিগত শ্রম আর উদ্যোগে উৎপাদিত সবজি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শহরতলির মোস্তফাপুর ইউনিয়নের হিলালপুরের একটি বাড়িতে প্রায় দেড় শ প্লাস্টিকের বাতিল পানির জারে এই সবজি চাষ করেছেন সালেহ এলাহী। পেশায় সাংবাদিক সালেহ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির পশ্চিম দিকের পুকুরপাড়ে সার বাঁধা অনেকগুলো পানির জার। এর মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ফুলে-ফসলে লাবণ্য ধরা টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের মৌসুমি সবজির গাছ। টমেটো ছাড়া এই জারের মধ্যে আছে বেগুন, পেঁয়াজ, মরিচ, ফরাশ, ডাঁটা, লেটুসপাতা ইত্যাদি। বাড়ির পুকুরের দক্ষিণ দিকের পাড়ের দুই পাশে জারগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে পুকুরপাড় দিয়ে চলাচলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সালেহ এলাহী জানিয়েছেন, জেলা শহরের বিভিন্ন বাড়ি ও কার্যালয়ে পানি পরিবেশন করে একটি প্রতিষ্ঠান। এ কাজে ব্যবহৃত জার ছিদ্র বা অন্য কারণে নষ্ট হয়ে গেলে তারা বাতিল আবর্জনার স্তূপে জমা করে রাখে। তাদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের এই জারগুলো তিনি সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এই জন্য কোম্পানিকে কোনো টাকাপয়সা দিতে হয় না। নষ্ট হওয়া এই জারগুলো এনে তিনি সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন।
এভাবে সবজি চাষের পদ্ধতিটাও বেশ সহজ। প্রথমে জারের ওপরের দিকে সমান করে কেটে ফেলেন সালেহ। এরপর শুকনো গোবর, লাল, সাদা ও কালো জাতের সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করা হয়। মাটি প্রস্তুত হওয়ার পর তা জারের মধ্যে ১৫-২০ দিন রেখে দেন। এরপর এই মাটিতে চারা রোপণ করা হয়। গাছে তিনি কোনো ওষুধ ব্যবহার করেন না। কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে তাতে ছাই ব্যবহার করেন। খুব সামান্য জৈব সার ব্যবহার করেন। গোবর থাকার কারণে তেমন সারও লাগে না। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর চার-পাঁচ শ টাকার বেশি খরচ হয়নি। বাকিটা নিজের শ্রম।
সালেহ এলাহী বলেন, তিনি এমনিতেই খেতে সবজি চাষ করেন। কিন্তু খেতে মাটি শুকাতে সময় নেয়। এ জন্য গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ আগাম সবজি চাষ করতে পারেন না। বিকল্প হিসেবে তিনি এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
সালেহ এলাহীর এই সবজি বাগানের ১২৬টি জারে টমেটো লাগানো হয়েছে। এগুলো কলম করা চারা। প্রতিটি জারে দুটো করে গাছ। ১৬টি জারে আছে বেগুনগাছ। ফলের প্লাস্টিকের ঝুড়ি ও জারে লাগানো হয়েছে পেঁয়াজ। ছয়টা ঝুড়ি ও পাঁচটি জারে লাগানো হয়েছে ১২৪টি পেঁয়াজের গাছ। সেখান থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সালেহ এলাহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময়ই সবজি চাষ করি। কিন্তু সবজির জমিতে পানি শুকাতে সময় লাগে। তা ছাড়া, অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটার পর সবজি রোপণ করতে দেরি হয়ে যায়। এ জন্য প্লাস্টিকের জারে এভাবে চার-পাঁচ বছর ধরে আমি আগাম সবজি চাষ করছি। এতেই আমার নিয়মিত চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এই সবজি চাষে আমার শ্রম দেওয়া ছাড়া আর তেমন খরচও নেই। আগস্ট মাস থেকে সবজি বাগানের টমেটো খাচ্ছি। এ রকম চাষের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’