হাজারো পর্যটকে মুখর বান্দরবান

বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলো হাজারো পর্যটকের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে। তরুণ পর্যটকেরা জেলা শহরের বাইরে থানচি ও রুমা উপজেলার গহিনে ছুটে যাচ্ছেন। থানচি উপজেলা সদরে গতকাল শনিবারও তিন্দু, রেমাক্রি, নাফাকুম ও বড়মদকে যাওয়ার জন্য শত শত পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এ মাসের শুরু থেকে পর্যটন ব্যবসা চাঙা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় পর্যটকেরা পরিবারপরিজন নিয়ে দলে দলে এসে ভিড় করছেন। এ অবস্থা এপ্রিল পর্যন্ত থাকলে মন্দার ক্ষতি কাটিয়ে লাভজনক হবে জেলার পর্যটন ব্যবসা।

জেলা শহর থেকে বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের শৈলপ্রপাত, ওয়াইজংশন, চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর ও থানচি পর্যন্ত ঘুরে অসংখ্য পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে।

নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে আসা ঢাকার মঈনুল হাসান বলেছেন, তাঁরা পরিবারসহ ৫০ জনের একটি দল এসেছে। বান্দরবানের অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও সংস্কৃতি দেখে সবাই অভিভূত।

থানচি উপজেলা সদরে তরুণ-তরুণীদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। যন্ত্রচালিত নৌকায় রেমাক্রি ও নাফাকুমে যাচ্ছিলেন ঢাকার একটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক সাইফুল ইসলাম ও স্ত্রী মারুফা ইসলাম। তাঁরা রাঙামাটি হয়ে এসেছিলেন। 

মারুফা ইসলাম বললেন, রাঙামাটি আর বান্দরবান অপরূপা মনে হয়েছে তাঁর কাছে। পাহাড়, সবুজ বনভূমি, সহজ–সরল পাহাড়ি জীবন তাঁর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর বর জানিয়েছেন, বান্দরবান ও রুমায় ঘুরে বেড়ানো জায়গা অনেক বেশি। থানচিতে তিন্দু, রেমাক্রিমুখ, নাফাকুম, বড়মদক, লেক্রি, সাফাহাকঙ পাহাড়, রুমায় বগালেক, রিঝুক ঝরনা, কেওক্রাডং, তাজিংডং পাহাড়সহ অসংখ্য জায়গা রয়েছে। এ জন্য জেলার পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

পর্যটকদের পথপ্রদর্শকদের (গাইড) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটকেরা উপজেলা সদরে থাকতে চান না। দূরে প্রকৃতির কাছে যেতে চান। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর থানচিতে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ হাজার ৩৫০ জনের অধিক পর্যটক এসেছেন। যা আগে কল্পনাও করা যেত না।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল-বিশ্রামাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, গত কয়েক বছর বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসার মন্দা যাচ্ছিল। এবারের পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। এ রকম অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক বলেছেন, জেলায় একমাত্র থানচি উপজেলায় বন, পাহাড়, নদী ও ঝরনার অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। এ জন্য প্রকৃতিপ্রিয় পর্যটকেরা এখানে ছুটে আসছেন। এ প্রাণ-প্রকৃতি ঘিরেই ভবিষ্যতে থানচিই হবে পর্যটনের কেন্দ্রস্থল।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর কামরুজ্জামান বলেছেন, ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজারের বেশি পর্যটক আসছেন। যা আগে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ পর্যটকও পাওয়া যেত না।