সেনাবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে ৭৭তম বিএমএ কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেটকে ‘সোর্ড অব অনার’ দেন। ২৯ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে ৭৭তম বিএমএ কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেটকে ‘সোর্ড অব অনার’ দেন। ২৯ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় চাই সেনাবাহিনী হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।’

সশস্ত্র বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই।’ পাশাপাশি নবীন সেনাসদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতী ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩৪ জন বাংলাদেশি, ২৯ জন সৌদি, ১ জন ফিলিস্তিনি, ১ জন শ্রীলঙ্কানসহ মোট ২৬৫ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সাবির নেওয়াজ শাওন ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গৌরবজনক ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এ ছাড়া কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. বরকত হোসেন সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মা-বাবা ও অভিভাবকেরা নবীন অফিসারদের র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিয়ে দেন। ক্যাডেটদের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব সকলের। সকলে মিলে আসুন আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’

জাতির পিতার অবদান স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে সামরিক বাহিনীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। এ কারণে একটি শক্তিশালী, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিলিটারি একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। সাময়িকভাবে কুমিল্লায় এই মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করা হয়, যেটা ছিল একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি স্বাধীন দেশে সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও এই যাত্রা শুরু করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

বিশ্বশান্তি স্থাপনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষ অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাচ্ছে, সেসব দেশই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সেনাবাহিনীকে কাজ করতে হয়। কাজেই, আমরা সব সময় চাই, আমাদের সেনাবাহিনী সব সময় আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন হবে, সুপ্রশিক্ষিত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে আমি এইটুকু বলব, আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত চৌকস এবং দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নতুন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আজকে নতুন কর্মস্থলে আপনারা পদার্পণ করবেন। জাতির পিতা যে নির্দেশ দিয়েছেন, যে শপথ আপনারা গ্রহণ করেছেন—ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মান্য করা, সেটা যেমন আপনাদের করতে হবে। সেই সঙ্গে জাতির পিতা আরও বলেছিলেন, আপনাদের অধীনস্থ যাঁরা থাকবেন, তাঁদের দিকেও আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে।’

শেখ হাসিনা এ সময় মিলিটারি একাডেমিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে বলেন, ‘চার বছর মেয়াদি অনার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিও চালু করা হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটদের কমিশন লাভের সময়কাল আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি, যাতে এটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়।’

বঙ্গবন্ধু-কন্যা ২০২০ সালে তাঁর সরকার এবং আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই সময়কে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, যে সময়ে বাংলাদেশে আর হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না।