প্রাণের টানে ছুটে এসেছেন হাজারো শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র সে বিষয়টিই বারবার জানান দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সার্বিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো একটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এই একটি খাতই বর্তমানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশ অবদান রাখছে। আমাদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৫৩ টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা হয়।   অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশব্যাপী যে অবকাঠামো আমরা তৈরি করেছি, সেটি এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শিতার অভাব এবং শুধু রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সংকীর্ণ চিন্তা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করেছে।
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র সে বিষয়টিই বারবার জানান দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সার্বিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো একটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এই একটি খাতই বর্তমানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশ অবদান রাখছে। আমাদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৫৩ টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা হয়। অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশব্যাপী যে অবকাঠামো আমরা তৈরি করেছি, সেটি এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শিতার অভাব এবং শুধু রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সংকীর্ণ চিন্তা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করেছে।

১৯৫৯ সালে বাংলা বিভাগ চালু হলে এতে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন মুহম্মদ আলীম উদ্দিন। উত্তরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজের শতবর্ষ উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ৮০ বছর বয়সেও বার্ধক্য তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎসবে হাজির হওয়া থেকে। জীবনের ভারে নুয়ে পড়লেও ছুটে এসেছেন প্রাণের টানে।

ছাত্রজীবনের কত স্মৃতি মনের পটে উঁকি দেয়। সেসব স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বললেন, কলেজের বাংলা বিভাগ চালু হওয়ার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। উচ্ছ্বাসও ছিল বেশি। প্রথম ব্যাচে ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ছাত্রী ছিলেন। ’৫৮ সালে কলেজে এসেছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। প্রবীণ এই শিক্ষার্থী পরবর্তী ওই বিভাগেই শিক্ষকতায় সম্পৃক্ত হন। কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন।

‘শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান’ স্লোগানে গতকাল রোববার দুই দিনব্যাপী শতবর্ষ উৎসব উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে। বেলা ১১টায় সমবেত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও উৎসব পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কলেজ অধ্যক্ষ শেখ আনোয়ার হোসেন। উৎসব পতাকা উত্তোলন করেন উৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক শিক্ষক বিমল চন্দ্র রায়।

শতবর্ষ উদ্‌যাপনে সাবেক ও বর্তমান প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। উৎসবস্থল কলেজ মাঠ ছাড়াও কলেজের বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল বিভিন্ন ব্যাচভিত্তিক শিক্ষার্থীদের আড্ডা–গল্প। হাসি–ঠাট্টায় জমে ওঠে পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ। ছোট ছোট জটলা করে নাচগানেরও আসর চলে। চলে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ–উল্লাস।

উৎসব উদ্বোধনের পর শোভাযাত্রা বের হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় মূল মঞ্চে শুরু হয় শুভেচ্ছা বক্তব্য, আলোচনা ও স্মৃতিচারণা। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন কলেজ অধ্যক্ষ শেখ আনোয়ার হোসেন। আলোচনা ও স্মৃতিচারণা করেন উৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক বিমল চন্দ্র রায়, সদস্যসচিব আখতারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক ভিপি আলাউদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে কলেজের ছয়জন শহীদ শিক্ষক এবং মুক্তিযুদ্ধে সাবেক তিন শহীদ শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

এদিকে শতবর্ষের উৎসব নিয়ে কলেজের বিশাল মাঠজুড়ে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। সেই সঙ্গে কলেজ রং করা চলছে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও।

দিনভর অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ৭৩ সালে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কলেজের ছাত্র ছিলাম। আবার এই কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষকও ছিলাম। সাহিত্য–সংস্কৃতিচর্চায় অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেই স্মৃতির টানে এখনো ছুটে আসি বারবার আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে। এবারের শতবর্ষ উৎসবেও বসেছে প্রাণের মেলা। এ জন্য অনেক আনন্দিত।’

’৭৫ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা এলাকার সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘আমি জিএল (গোবিন্দলাল) ছাত্রাবাসে ৩০ নম্বর কক্ষে থাকতাম। সেই কক্ষটি দেখতে যাই। গিয়ে অনেক পুরোনো স্মৃতির কথা মনে পড়েছে। মনে হয় সেই দিনে ফিরে গিয়েছি।’

বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন রয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর কারমাইকেল কলেজ শতবর্ষে পদার্পণ করে। শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে কলেজের শতবর্ষ উদ্‌যাপন পর্ষদ ওই বছর (২০১৬) দুই দফায় দুই উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করে। তবে শতবর্ষের অনুষ্ঠান হয়নি। প্রধান অতিথি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ হওয়ার কারণে শতবর্ষের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয় বলে কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়।