ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শিশু ইয়াসফাকে হত্যা করে কিশোর, আদালতে স্বীকারোক্তি

শিশু ইয়াসফা। ছবি: সংগৃহীত
শিশু ইয়াসফা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ভাটারার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছয় বছরের ছোট্ট শিশু ইয়াসফাকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে এক কিশোর। শিশু ইয়াসফাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ওই কিশোর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু জাফর হাওলাদার সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, শিশু ইয়াসফাকে নিজ কক্ষে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ওই কিশোর। কীভাবে শিশু ইয়াসফাকে সে হত্যা করেছে তা সবিস্তারে আদালতের কাছে বর্ণনা দিয়েছে সে।

এসআই আবু জাফর হাওলাদার জানান, আসামির বয়স ১৭ বছর। সে বলছে, ইয়াসফাকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে হত্যা করেছে। তিনি জানান, হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে ফরেনসিক পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গুড নেইবার নামের একটি বেসরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসফা। সে ভাটারার বারবিঘা এলাকায় নিজেদের বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। ২৬ ডিসেম্বর নিজেদের বাসার এক ভাড়াটিয়ার কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় ইয়াসফাকে উদ্ধার হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় শিশু ইয়াসফার বাবা ইয়াছিন মুন্সী বাদী হয়ে ভাটারা থানায় হত্যা মামলা করেন।

আসামি কিশোরের দুর্দান্ত অভিনয়
নিহত শিশুটির বাবা-ভাই ও তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া চারটার দিকে ইয়াসফা তাদের বাসার অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। একপর্যায়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু ইয়াসফা বাবা-মায়ের কক্ষে ফেরে না। তখন তার মা মরিয়ম মেয়ের খোঁজ শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে ইয়াসফার বাবা ইয়াছিনসহ নিকটাত্মীয়দের ফোন দিয়ে খবর নিতে বলেন।

ইয়াসফার বাবা ইয়াছিন মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি শাহজাদপুর এলাকায় তাঁর দরজি দোকানে ছিলেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী মরিয়ম সন্দেহ করেন, তাদের ভাড়াটে ওই কিশোরকে। আসামি কিশোর আর ইয়াসফাদের থাকার ঘর পাশাপাশি।

এসআই আবু জাফর হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি কিশোর আদালতে বলেছে, সেদিন সন্ধ্যার আগে সে তার কক্ষে টিভি দেখছিল। আর মোবাইলে লুডু খেলছিল। তখন কিশোরের কক্ষে যায় শিশু ইয়াসফা। তখনো কিশোর মোবাইলে লুডু খেলছিল। একপর্যায়ে কিশোর ইয়াসফাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন শিশু ইয়াসফা বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং চিৎকার দেয়। তখন কিশোর ইয়াসফার মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। দুই হাত বেঁধে ফেলে।

পুলিশ কর্মকর্তা জাফর বলেন, শিশু ইয়াসফা কিশোরের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন গামছা দিয়ে শিশু ইয়াসফাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার লাশ তার নিজের খাটের নিচে রেখে দেয়। এরপর চুপচাপ নিজের কক্ষে বসেছিল সে। কোনো জায়গায় খোঁজ না পেয়ে শিশু ইয়াসফার মা আসামি ওই কিশোরের কক্ষে যান। আসামি কিশোর নিজেও তখন ইয়াসফাকে খোঁজ করার অভিনয় করে। তৃতীয়বার ইয়াসফার মা আসামি কিশোরের কক্ষে যান। তখন তিনি কিশোরের খাটের নিচে শিশু ইয়াসফার মৃতদেহ দেখতে পান। তখন ওই কিশোর ঘর থেকে পালিয়ে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু জাফর হাওলাদার বলেন, কিশোরকে তিনি আটক করেছেন নেত্রকোনায়। যত দ্রুত সম্ভব এ মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দেবেন। দুই বছর আগে কিশোরের পরিবার ইয়াসফাদের বাসায় ভাড়া ওঠে। কিশোরের বাবা রাজমিস্ত্রি।

শিশু ইয়াসফার বড় ভাই ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। তিনি সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আসামি ওই কিশোরকে তিনি ভালোভাবেই চিনতেন। ওই কিশোর সব সময় তার নিজের কক্ষে থাকত। টিভি দেখত আর মোবাইল চালাত।

ইয়াসফার বাবা ইয়াছিন মুন্সি বলেন, আসামি কিশোর বেশি দূর লেখাপড়া করেনি। কিছু করত না। সারাক্ষণ বাসায় থাকত। কারও সঙ্গে সে মিশত না।

ইয়াছিন মুন্সি জানান, তাঁর ছেলে ইশতিয়াকের জন্ম হয় ১৯৯৮ সালে। এর ১৫ বছর পর তার মেয়ে ইয়াসফার জন্ম হয়। তিনি যেখানে যেতেন ইয়াসফা সেখানে সব সময় যেতে চাইত। ইয়াসফার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ইয়াছিন। তিনি বলেন, ‘আমার নিষ্পাপ মেয়েকে আমারই বাসার ভাড়াটিয়ার ছেলে মেরে ফেলল।’

ইয়াসফার ভাই ইশতিয়াক বলেন, তার একমাত্র ছোট বোন ইয়াসফা। ও খুব মেধাবী ছিল। সর্বশেষ পরীক্ষায় সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে ইয়াসফা। ইয়াসফা যেদিন খুন হয় সেদিন তিনি ছিলেন বান্দরবানে। বান্দরবানে যাওয়ার আগে ইয়াসফা বলেছিল, তার জন্য পাহাড়ি একটা পুতুল আনতে। কিন্তু বান্দরবানে থাকতেই তিনি পান ইয়াসফার মৃত্যু সংবাদ।