এবার সূর্য দেখেই বর্ষবিদায়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পর্যটননগরী কক্সবাজারে হোটেল–মোটেল সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদ্‌যাপনের জন্য জড়ো হয়েছেন প্রায় চার লাখ পর্যটক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় কক্সবাজার সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনের কোনো আয়োজন নেই। এতে পর্যটকেরা কিছুটা হতাশ। 

 গতকাল সোমবার বেলা ১১টা। সৈকতের সিগাল পয়েন্টে ভেজা বালু দিয়ে ঘর তৈরি করছিলেন ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা তারান্নুম রহমান। সঙ্গে তিন সন্তান ও স্বামী। তাঁদের একটু দূরে সমুদ্রের শীতল জলে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন অসংখ্য ব্যক্তি। কয়েকজন পর্যটক ভেজা বালু দিয়ে তৈরি বালুর ঘরে ছবি তুলছেন। 

তারান্নুম বললেন, সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনের জন্য তাঁরা গত শুক্রবার কক্সবাজার আসেন। ওঠেন সৈকতসংলগ্ন তারকা হোটেল সিগালে। পরে জানতে পারেন, সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন নেই। সিগাল হোটেলেও রাখা হয়নি বর্ষবিদায়ের কোনো আয়োজন। এখন ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ সূর্যটাকে বিদায় জানিয়ে ঢাকায় ফিরবেন তাঁরা। 

তারকা হোটেল ‘সি গাল’-এ ৩৫০ জন পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা আছে। গতকাল পর্যন্ত সব কক্ষেই অতিথি ছিল। এর মধ্যে বিদেশি অতিথি ১৫ জন। সি গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, উৎসব আয়োজন করতে গেলে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। 

পাশের তারকা হোটেল ‘দ্য কক্সটুডে’তে অতিথি আছেন শতাধিক। হোটেলের পরিচালক আবু তালেব বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তাঁরা নিজস্ব অতিথিদের জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইটের সংক্ষিপ্ত আয়োজন রেখেছেন। সেখানে তারকা শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন। তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, লংবিচ হোটেল, রয়েল টিউলিপ, প্রাসাদ প্যারাডাইস, হোটেল সি প্যালেসসহ চার শতাধিক হোটেল–মোটেলে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। 

বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের জায়গা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’। ব্যতিক্রমী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে লোকজন মারমেইডে জড়ো হয়। কিন্তু এবার সেখানেও নেই কোনো আয়োজন।

রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, রিসোর্টে এখন শতাধিক দেশি–বিদেশি অতিথি থাকলেও কোনো আয়োজন রাখা হয়নি। কারণ, প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। 

কুমিল্লার দাউদকান্দির ব্যবসায়ী সালমান খান (৫৫) বললেন, পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে লাখো মানুষের জন্য কোনো আয়োজন নেই ভাবতে অবাক লাগছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বিপুল লোকজনকে বিনোদন থেকে দূরে রাখা ঠিক হয়নি। 

পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামতে এবারও বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন রাখা হয়নি। সমুদ্রসৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে এ ধরনের কিছু করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, পটকা ফোটানো যাবে না। মাদকের বিকিকিনি বন্ধে হোটেল–মোটেলসহ শহরের বারগুলো বন্ধ রাখা হবে। তবে তারকা হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কেউ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাইলে (ইনডোর) তা রাত দুইটার মধ্যে শেষ করতে হবে।

ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে চার লাখ পর্যটককে নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।