রাজনীতিবিহীন ছিল বছরটা

সাখাওয়াত হোসেন
সাখাওয়াত হোসেন

বিদায়ী বছরটা অনেকটাই রাজনীতিবিহীন বলা চলে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ নিয়ে কিছুটা হইচই করেছে। তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার ফলে সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেনি। মামলা, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও সেখান থেকেও তারা সরে আসে।

বাংলাদেশে রাজনীতি আবর্তিত হয় নির্বাচন ঘিরে। ২০১৯ সালে বড় কোনো নির্বাচন হয়নি। এ জন্য
রাজনীতির উত্তাপটাও ছড়ায়নি। একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এবার বিরোধীদের ওপর পাইকারি হারে মামলা দেওয়া কিংবা মারধরের ঘটনা সেভাবে আসেনি। বিরোধী দল অনেকটা খোলসে ঢুকে পড়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া সরকারও হয়তো তার মনোভাবের পরিবর্তন এনেছে।

গত এক বছরে সবচেয়ে বড় দুটি ঘটনা ঘটেছে শিক্ষাঙ্গনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে একটা আশা-উত্তেজনা ছিল। ওই নির্বাচনটা পুরোপুরি সঠিক হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের মতোই অনিয়ম-কারচুপির খবর এসেছে। এরপরও ভিপিসহ বেশ কিছু পদে ভিন্নমতের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এরপরই ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা হয়েছে, তা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যা দেশের সব বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রতিবাদ হয়। ভিপি নুরুল হকের ওপর হামলা এবং আবরার হত্যা—দুটিই ভিন্নমত দলনের উদাহরণ। অর্থাৎ ভিন্নমতের ওপর হামলার বিষয়টি আগের মতোই ২০১৯ সালেও ছিল।

বছরের আরেকটি আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ক্যাসিনো, জুয়া ও দুর্নীতিবিরোধী ‘শুদ্ধি অভিযান’। রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার একটা গুণগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তা থেমে গেছে বলেই মনে হয়। শাসক শ্রেণির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে হয়তো অভিযানটি আর এগোতে দেওয়া হয়নি।

বছরের শেষের দিকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। তবে এতে চমকপ্রদ কিছু দেখা যায়নি। অনেকটা নিয়মরক্ষার মতো হয়েছে। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চায় যে বড় কোনো গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসবে, সে রকমটা মনে হয়নি।

২০২০ সালে রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপ ছড়াতে পারে। কারণ, এ বছরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনের ভোট হতে যাচ্ছে। শুরুতেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত হবে। এই নির্বাচনটা যদি ভালো না হয়, মেনে নেওয়ার মতো না হয়, তাহলে এর রেশ দীর্ঘদিন থাকবে। নির্বাচনব্যবস্থাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রতিবাদ হতে পারে। আগে সরকার এ ধরনের প্রতিবাদ মোকাবিলায় খুব একটা চ্যালেঞ্জে পড়েনি। তবে ভবিষ্যতে যে চ্যালেঞ্জে পড়বে না, তা হলফ করে বলা যাবে না। ফলে বছরের শুরুতে একটা ভালো নির্বাচন পুরো বছরের রাজনীতিতে সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার