চলতি বছর মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক: আসক

মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব তাহমিনা রহমান, উপপরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। ছবি: প্রথম আলো
মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব তাহমিনা রহমান, উপপরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। ছবি: প্রথম আলো

চলতি বছর (২০১৯ সাল) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মতপ্রকাশের অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যু, গুম, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এ কথা বলেছে সংগঠনটি।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে আসক। যেখানে বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশে ৩৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ১৪ জন। আর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন বাংলাদেশি। এর বাইরে শিশু নিহত হয়েছে ৪৮৭ জন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ গুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছেন ১৩ জন। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৪১৩ জন। ২০১৮ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৭১৩ আর বিএসএফের গুলিতে মারা যায় ১৪ জন।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব তাহমিনা রহমান, উপপরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।

মানবাধিকারের ক্ষেত্রগুলোর চলতি বছরের পর্যালোচনায় আসক বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বন্ধ হয়নি। উল্টো সরকারের পক্ষ থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো অস্বীকার করা হয়েছে। লিখিত প্রতিবেদনে আসক বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৮৮ জনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন ৩৫৬ জন আর মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৮৭ জন।

এ ছাড়া, চলতি বছর আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আসক বলেছে, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও ভিন্নমত প্রকাশের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া, মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা এসেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হকসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২৮ জনকে নির্যাতনের কথাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

চলতি বছর আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড। ওই ঘটনার উদাহরণ দিয়ে চলতি বছর নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের চিত্র পর্যালোচনা করেছে আসক। তারা বলছে, এ বছর যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েও নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন আরও ৪৪ জন পুরুষ। উত্ত্যক্ত করার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ মোট খুন হয়েছেন ১৭ জন। ২০১৮ সালে দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ১৭০ জন নারী।


আসকের প্রতিবেদনে শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। কন্যাশিশু ধর্ষণের পাশাপাশি ছেলেশিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নিহত হয়েছে ৪৮৭ জন। এসব শিশুর মৃত্যুর অন্যতম কারণ শারীরিক নির্যাতনে হত্যা, ধর্ষণের পর হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা। ২০১৮ সালে শিশু নিহতের সংখ্যা ছিল ৪১৯।

এর বাইরে গণপিটুনি, শ্রমিক অধিকার, ধর্মীয় সংখ্যা লঘু, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোও তুলে ধরা হয় আসকের প্রতিবেদনে। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া, মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনও জরুরি।